আমার চে‌া‌খের আলোয় যেভা‌বে দে‌খে‌ছি। *✍




কম‌লে‌শের কলম✍* 


 *নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা আজ আমাদের শিশু-কিশোর-যুবকদের পথ হারা করে ক্রমান্বয়ে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ঠেলে দিচ্ছে তাদেরকে এমন এক পথে, যে পথে বোধ-বুদ্ধি-বিবেক যেমন বিকশিত হবার নয়, তেমনি উন্নত নৈতিক চরিত্র গঠনের কোন ব্যবস্থাও তাতে নেই।*

 *আগে মনে করা হত কেউ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ডিগ্রী অর্জন করলে সে শিক্ষিত।
যে যত বেশি বা বড় ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে সে তত বেশি শিক্ষিত আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যে জ্ঞান অর্জন করা হয় তাই শিক্ষা । 

কিন্তু একথাটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য ? একজন পড়ালেখা না জানা কৃষক ,তার জমির ফসল ফলায় । অন্য কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে , জ্ঞান দিয়ে সাহায্য করে, সকলের উপকার করে । 

আবার একজন সরকারী ডাক্তার হাসপাতালে নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে, গরীব রোগীদের সাহায্য করেনা, শুধু টাকা উপার্জন‌‌ের দি‌কেই তার ধ্যান জ্ঞান । 

এখন বলুনতো কাকে শিক্ষিত বলবেন !* *আধুনিক শিক্ষা বিজ্ঞানীদের মতে শুধু জ্ঞান বা বিদ্যা অর্জন করার মধ্যেই শিক্ষা অর্জন হয়না । 

যদি কেউ কোন জ্ঞান বা বিদ্যা অর্জন করে তবে সে তার সে জ্ঞানকে ভাল কাজে ও লাগাতে পারে আবার খারাপ কাজে ও লাগে পারে । শুধু এই জ্ঞান অর্জন করাটাকে শিক্ষা বলা যাবেনা । 

তখন তাকে বলা হয় শিখন । অর্থাৎ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে আচরনের পরিবর্তনকে শিখন বলা হয় । এই আচরনের পরিবর্তন ভাল বা খারাপ দুদিকেই হতে পারে । তাই শিখন কখনও শিক্ষা হতে পারেনা ।* 

 *শিক্ষা বিজ্ঞানীদের মতে, শিক্ষা হচ্ছে জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধের আলোকে আচরনের কাঙ্খিত, স্থায়ী ও ইতিবাচক পরিবর্তন । যেমন -পূজার মন্ত্র পড়ার জন্য নিয়ম কানুন সহ যা কিছু দরকার তা জানা হল পূজার বিষ‌য় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা ।

 আর কেউ এই জ্ঞান অর্জন করার পর নিয়মিত নিয়ম মত মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করার ফলে তার মূল্যবোধের পরিবর্তন আসবে । ফলে মন্ত্র পা‌ঠের ক্ষে‌ত্রে তার চরিত্রে স্থায়ীভাবে পরিবর্তন আনবে এবং কখনও সে পূজা পাঠ কে পরিত্যাগ করতে পারবেনা । 

আর এটাই হচ্ছে শিক্ষা । 

এভাবে যে কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে উদাহরণ দেওয়া যায় । শুধু কোন বিষয় ভিত্তিক নয় শিক্ষা যে কোন ভাবে হতে পারে । হতে পারে ব্যাক্তিগত ভাবে, পারিবারিক ভাবে, প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ও রাষ্ট্রীয় ভাবে ।* 

 *আমরা অনেক সময়ই শিশু-কিশোরদের সাথে মিথ্যা বলে থাকি। এ সম‌ন্ধে এক‌টি গ‌ল্পের প্রস‌ঙ্গে আসি।* *একবার মহম্ম‌দের এর সামনে এক মহিলা একটি ছোট্ট বাচ্চাকে কোলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছিলেন। 

কিন্তু বাচ্চা কাছে যেতে চাচ্ছিল না। অতঃপর মহিলা বাচ্চাটিকে কাছে নেওয়ার জন্য বললেন : কাছে এসো, তোমাকে একটি জিনিস দেব। মহম্মদ এ কথা শুনে বললেন, সত্যিই কি তুমি তাকে কিছু দেবে? না এমনিই তাকে কাছে নেওয়ার জন্য বলছ? মহিলা বললেন, আমার খেজুর দেওয়ার ইচ্ছা আছে। 

মহম্মদ বললেন, যদি তোমার খেজুর দেওয়ার ইচ্ছা না থাকত এবং শুধুমাত্র তাকে আহ্বান করাই উদ্দেশ্য হত তাহলে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যা বলার গুনাহ লেখা হত। [আবু দাউদ: ৪৯৯১]* *

শিশুকালের শিক্ষা পাথরে অঙ্কনের ন্যায়। শিশুরা শিশুকালে যতটুকু নীতি-নৈতিকতা বা শিষ্টাচার যতদ্রুত শিখতে সক্ষম হয়, সুন্দর-সুশীল-সৃজনশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে যতটুকু জ্ঞান তাদের কচি মনে এঁকে দেয়া হয়, ততটুকুই কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত তাদের মন মগজে পাথরে অঙ্কনের মতই থেকে যায়। কখনো স্মৃতি থেকে মু‌ছে যায় না।* *

আমরা শিশুদের দিকে তাকিয়ে থাকি কেননা, শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তারা ভবিষ্যতে আমাদের অপূর্ণ স্বপ্নসাধ পূরণ করবে আর আমাদের এ যাবত অর্জিত উন্নতিকে ভবিষ্যতের হাতে পৌঁছে দেবে। তারা সযত্নে গড়ে উঠলেই একটি সুন্দর দেশ গড়ে উঠবে, গড়ে উঠবে একটি সুন্দর পৃথিবী। 

কিন্তু শিশুদের এক বিরাট অংশ অবহেলা আর অনাদরে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।* *শিক্ষা বিবর্জিত ব্যক্তি যেমন আদর্শ ব্যক্তি হতে পারে না, তেমনি শিক্ষা বিবর্জিত পরিবার ও সমাজ কখনও আদর্শ পরিবার ও সমাজ হতে পারে না। কাজেই বলা হয়ে থাকে শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। তবে বর্তমান ধর্ম বিবর্জিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যক্তি -পরিবার ও সমাজে কল্যাণের স্থলে অকল্যাণই বেশী হচ্ছে। সুতরাং শ্লোগান হওয়া দরকার “সুশিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড”। 

আমাদের করনীয় । যেমনঃ পারিবারিক শিক্ষা বাড়াতে হবে , নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই ,শিশুর সামাজিকীকরনের প্রতি নজর রাখতে হবে ,নজরদারী নয় তত্ত্বাবধান করতে হবে ,শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।* *

গ্রাম ও অবহেলিতদের ব্যাপারে ভাবনা..... সর্বস্তরে শিশু শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে ,গ্রাম পর্যায়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে আরো সচেতনতা বাড়াতে হবে, অবহেলিতদের জন্য সামাজিক পর্যায়ে স্কুল বা শিক্ষার ব্যবস্থা বাড়াতে হবে ,শিশু শিক্ষার ব্যাপারে সচেতনতা ও প্রচারনা বাড়াতে হবে ।* *

সবশেষে বলা প্রয়োজন, একটি আত্মপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য দেশের শিশুদের একটি সুন্দর ও নিরাপদ জীবন উপহার দ‌েওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।* *"ঘু‌মি‌য়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্ত‌রে"।*