সংবাদদাতা: 

উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশন সংস্থার উদ্যোগে ৯ আগস্ট ২০২১ সোমবার এক ভার্চুয়াল আন্তজার্তিক আয়োজনে পালিত হলো বিশ্ব কবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহাপ্রয়ান দিবস। দুই বাংলার কতিপয় লেখক, কবি, সম্পাদক, গবেষক, সাংবাদিক ও গীতিকারদের মিলন মেলায় সমৃদ্ধ ছিল এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে কবিগুরুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবার সাথে সাথে তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। বাংলাদেশ থেকে বিশিষ্ট কবি ও লেখক রোকেয়া ইসলামের প্রাঞ্জল সঞ্চালনার পালে ভর করে শুরু হয় মনোজ্ঞ আলোচনা পর্ব। তবে প্রারাম্ভিক লগ্নেই বাংলাদেশের শ্রদ্ধেয় লেখক ও গীটারিস্ট নাহার আহমেদের গীটারের জাদুকরী সুরের মূর্ছনায় তোলা রবিরাগে উদ্বেলিত হন সকলে। বক্তব্য রাখেন, পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট কবি ও লেখক রেখা রায়। দুই পর্বের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি তুলে ধরেন বিশ্বকবির জীবনের কিছু চুম্বক অংশের। 



শুরুতেই তিনি কবিগুরু তাঁর জীবন প্রভাতে দাঁড়িয়ে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলীতে যে মরণ কবিতা রচেছিলেন সেটি আবৃত্তি করে শোনান। তিনি জানান, কবিগুরু আসলে কেবল জীবনকে নয় মৃত্যুকেও এক অনন্য মাত্রায় আখ্যায়িত করে তুলেছিলেন। তিনি মৃত্যুকে অবলোকন করেছিলেন নানন্দিকতার আরেকটি রূপ হিসেবে। অনবদ্য এই পংক্তিমালার ছন্দে কবিগুরু বলে গিয়েছেন মৃত্যুভয় কখনই জীবনের বৃহত্তর আবেদন হতে বড় হতে পারে না। পাশাপাশি বেদনাবিধূর বাইশে শ্রাবণে কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে জোরাসাঁকোর বাড়িতে বয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের শেষ কিছু মুহুর্তের শ্বাসরুদ্ধকর করুণ মর্মকথা তিনি বর্ণনা করেন। যা সত্যিকার অর্থে সকলের হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে তোলে। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের লেখক, গল্পকার, ঔপন্যাসিক ও কলামিস্ট সোনিয়া তাসনিম খান। তার আলোচনায় উঠে আসে, বাংলা সাহিত্যের নানা শাখায় রবীন্দ্রনাথের উত্তরোত্তর প্রভাবের কথা। শ্রদ্ধেয় কবির বর্ণিল জীবনের ওপর ভাবগম্ভীর সমৃদ্ধ বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বেগম রোকেয়া ইসলাম। কলকাতা ভ্রমণকালে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত জোড়াসাঁকোর বাড়িতে গিয়ে তাঁর কাটানো কিছু সময় এবং তার সেই সময়কার তাঁর একান্ত কিছু অনুভূতির কথা তিনি সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। পশ্চিমবঙ্গের উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশনের কর্ণধার ফারুক আহমেদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানটির গতিকে আরও ত্বরান্বিত করে তোলে। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক লোকমান পলা। ঘন্টাব্যাপী চলমান এই অনুষ্ঠানে উঠে আসে কবিগুরুর জীবনের নানা জানা অজানা ঘটনা ও তথ্য। সবশেষে নাহার আহমেদ এবং রেখা রায়ের সুললিত কন্ঠের ডানায় ভর করে পরিবেশিত রবীন্দ্র সংগীতের মাধুকরী ছন্দে অনুষ্ঠানটির ছন্দময় পরিসমাপ্তি ঘটে। 

বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বাংলা সালের পঁচিশে বৈশাখ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী ও গল্পকার। মাত্র আট বছর বয়সেই তাঁর কলমের জাদুকরী ছোঁয়ায় বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য, অসাধারণ, নব অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। ১৮৭৪ সালে 'তত্ত্ববোধিনী' পত্রিকায় তাঁর প্রথম লেখা কবিতা 'অভিলাস' প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন৷ লিখেছেন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তাঁর সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর "গীতাঞ্জলি" কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯০৫ সালে বিশ্বকবি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন "শ্রীনিকেতন সংস্থার"। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর হাতে জন্ম নেয় বিশ্বভারতী। ১৯৮১ সালে পিতার আদেশে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, পাবনা, নাটোর এবং উড়িষ্যায় জমিদারী তদারকি শুরু করেন। জীবনের দীর্ঘদিন কাটিয়ে দেন শিলাইদহে। এখানে জমিদারবাড়িতে তিনি রচনা করেন অসংখ্য গান এবং কবিতা। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সারদা সুন্দরী দেবীর কোল আলো করে জন্মানো এই মহাকবির জীবনাবসান ঘটে বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ তাঁর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনে। 




বাংলা সাহিত্যাকাশে কবিগুরুর দৃপ্ত পদচারণা প্রভাকরের মতই উজ্জ্বল। অসাধারণ সব সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি আজীবন বাঙালি অস্তিত্বে এভাবেই যুগ যুগ ধরে লালিত হয়ে আসছেন এবং এভাবেই লালিত হয়ে যাবেন৷ বলা যায়, বাঙলা সাহিত্যের সমার্থক শব্দের আরেক নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর কালজয়ী সৃষ্টি তাঁকে সত্যিকার অর্থে করে তুলেছে মৃত্যুঞ্জয়। তিনি একাকার হয়ে মিশে আছেন বাঙালির সত্ত্বাতে, বাঙালির অস্তিত্বে আর তার ভালোবাসায়। স্বীয় সৃষ্টিযজ্ঞের মাঝে তিনি এভাবেই অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে। এ কথা বুঝি কবিগুরু তাঁর জীবদ্দশাতে আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই হয় তিনি লিখে গিয়েছেন:


"মরণ রে, তুহুঁ মম শ্যামসমান/ মেঘবরণ তুঝ, মেঘজটাজূট/ রক্তকমলকর..."