হাসিবুর রহমান


বাংলা সাহিত্যের বিকাশে পত্র-পত্রিকার ভূমিকা যথেষ্ট গুরত্বপূর্ণ। বর্তমানে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করাটা বড় কথা নয়, বড় কথা হল তাকে সম্মানের সঙ্গে ধরে রাখাটা। দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে সেই কাজটাই করে চলেছেন 'উদার আকাশ' পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ। সম্প্রতি তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হল 'উদার আকাশ' পত্রিকার কুড়ি বছর পূর্তি সংখ্যা ১৪২৮। দুইশত অষ্টাশি পৃষ্ঠার এই সংখ্যাটি যেমন কলেবরে সুপুষ্ট, তেমনই বিষয় বৈচিত্র্যে ঋদ্ধ। প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, অণু নাটিকা, অণু উপন্যাস, সাক্ষাৎকার, গ্রন্থ সমালোচনা বিভিন্ন বিষয়ে মোট একশ আশি জন কবি-লেখকের লেখায় সমৃদ্ধ উদার আকাশ পত্রিকার এই বিশেষ সংখ্যাটি। 
সম্পাদনার এই কাজটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই জটিল। পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ সেই কাজটি নিপুণভাবে সম্পূর্ণ করেছেন।

বাংলা গদ্য সাহিত্যের এক অন্যতম শাখা প্রবন্ধ। সেই শাখায় এক অসাধারণ সংযোজন প্রাবন্ধিক সুখেন বিশ্বাসের 'আমরা সবাই রাজা রাজার রাজত্বে'। প্রবন্ধটিতে রবীন্দ্র মতাদর্শে রাজা প্রজাদের সহযোগে শান্তিরাজ্য প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন লেখক তা সময়োপযোগী। শ্যামশ্রী বিশ্বাস সেনগুপ্তের 'অমূল্য রতন : সত্যজিতের পোস্টমাস্টার' প্রবন্ধে লেখিকা রবীন্দ্রনাথ ও সত্যজিতের সৃষ্টির মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের রতন সত্যজিতের চলচ্চিত্র নির্মাণ দক্ষতায় পাঠক ও দর্শক মনে প্রাণ পেয়েছে, হয়ে উঠেছে অমূল্য রতন। কুমারেশ চক্রবর্তীর 'সর্বাধিনায়কের প্রতি এক মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকের শ্রদ্ধাঞ্জলি' প্রবন্ধে মুজিব-স্মরণ এই সংখ্যার এক অন্যতম সংগ্রহ। পত্রিকার অন্যান্য প্রবন্ধগুলিও তথ্যবহুল ও মনোজ্ঞ আলোচনায় সমৃদ্ধ। এবার আসি গল্পের কথায়। লেখক ইসমাইল দরবেশের 'রুবাই শবনমের অ্যাম্বিশন' গল্পে রুবাইয়ের ব্যর্থ প্রেমের আকাশে ডানা মেলেছে আজিজ। রুবাই সব ভুলে আজিজের হাত শক্ত করে ধরে পাড়ি দিতে চেয়েছে ভবিষ্যতের পথ। সৌরভ হোসেনের 'বাঙালি' গল্প এগিয়েছে বাস যাত্রায় দু'জন পরস্পর অপরিচিত ব্যক্তির নিত্যদিনের সাধারণ কথোপকথনে, কিন্তু শেষ হয়েছে এক চমকপ্রদ উক্তিতে- 'ওহঃ! আমি তো ভাবলাম আপনি বাঙালি।' রাজকুমার শেখের 'অথৈ জলে' গল্পে উঠে এসেছে মুর্শিদাবাদের এক প্রত্যন্ত গ্রাম দাদপুরের বিলের পাড়ের দরিদ্র জেলেদের দুঃখ-দুর্দশার করুণ ছবি। গৌতম বিশ্বাসের 'কান্না' গল্পে 'লখাই, ফিইরে আয় বাপ আমার!' এ যেন অনেক বাঙালি দুঃখী মায়ের চিরন্তন আর্তি। অরুপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অণু নাটিকা 'কথোপকথন' ও চৈতালি বসুর 'অণু উপন্যাস 'বন্ধন' আকারে ছোট হলেও ঘটনা বিন্যাস ও চরিত্রচিত্রায়ণে দেখিয়েছেন বড় মুন্সিয়ানা। গল্প বয়ানে শুধু লেখকরাই নয়, গল্প চয়নে পত্রিকা সম্পাদক ফারুক আহমেদও দেখিয়েছেন অসাধারণ সম্পাদকীয় দক্ষতা। এবার বলব সাহিত্যের আদিমতম শাখা কবিতার কথা। কবিতা হল ব্যক্তিক অনুভূতি-আবেগের সুসংহত প্রকাশ। সেদিক থেকে কবিতায় সুবোধ সরকার, গোলাম রসুল, তৈমুর খান, নাসের হোসেন প্রমুখ কবিদের কবিতা পত্রিকায় এক উজ্জ্বল সংগ্রহ। কবিতার ভাব-ভাষা-ছন্দের দোলায় নড়ে উঠবে পাঠকের মন। অসংখ্য কবিতার ভিড়ে সুপাঠ্য কবিতা বাছাইয়ের কৃতিত্ব একান্ত ভাবেই সম্পাদক ফারুক আহমেদের। তার নিরলস প্রচেষ্টা ও আন্তরিক পরিশ্রমের ফসল এই সংখ্যা। এ-বছরের শারদ সংখ্যার ঝুড়ি থেকে 'উদার আকাশ' পত্রিকাটিকে  বেছে নেওয়ার সমস্ত উপকরণ উপস্থিত এই সংখ্যায়। আমার বিশ্বাস পত্রিকাটি পাঠক সংগ্রহে রাখতে পারেন, এক মূল্যবান সম্পদ হয়ে থাকবে। সাহিত্য আকাশে জ্বলজ্বল করছে উদার আকাশ প্রকাশন উদার জীবনের অন্বেষণ। উদার আকাশ কেবল পত্রিকা নয়, আত্মমর্যাদার অভিজ্ঞান। উদার আকাশ কেবল স্লোগান নয়, সুস্থ সমাজ গড়ার অঙ্গীকার। উদার আকাশ দিচ্ছে ডাক, সবার ঘরে ঘরে সাহিত্যের আলো পৌঁছে যাক। গবেষণার অনন্য নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে উদার আকাশ পত্রিকার প্রতিটি সংখ্যায়। সাহিত্যের নানান বিভাগে উদার আকাশ সাহিত্য সমৃদ্ধ লেখা প্রকাশ করে ইতিমধ্যেই ইতিহাস রচনা করছে। 



উদার আকাশ, কুড়ি বছর পূর্তি সংখ্যা ১৪২৮
সম্পাদনা: ফারুক আহমেদ 
ঘটকপুকুর, বি গোবিন্দপুর,
ভাঙড়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা-৭৪৩৫০২, পশ্চিমবঙ্গ,  ভারত। 
মুদ্রিত মূল্য: ২০০.০০
কথা : + ৯১ ৭০০৩৮২১২৯৮
কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের "পাতিরাম" স্টলে পাওয়া যাচ্ছে উদার আকাশ কুড়ি বছর পূর্তি সংখ্যা ১৪২৮ সংখ্যাটি।