উদার আকাশ : ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪৩১


আমিনুল ইসলাম 



কয়েকদিন আগে হাতে পেয়েছি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকে প্রকাশিত ‘উদার আকাশ : ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪৩১’। এই সংখ্যার বিশেষ বিষয়:  মোস্তাক হোসেন। প্রকাশক ও সম্পাদক ফারুক আহমেদ।  এই সংখ্যার ভূমিকা লিখেছেন পবিত্র সরকার। এটি ২৩ বর্ষ ২য় সংখ্যা।  অর্থাৎ বিগত ২৩ বছর যাবৎ উদার আকাশ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়ে আসছে।



পশ্চিমবঙ্গের কর্মবীর ও শিল্পপতি পশ্চাদপদ অনগ্রসর জনগোষ্ঠী ও মুসলমানদের জন্য একটি উজ্জ্বলতম উদাহরণ। তিনি নতুন উদ্যোগ, প্রচণ্ডরকমের পরিশ্রমশীলতা, দূরদর্শিতা, ঝুঁকি নেয়ার সাহস, প্রতিযোগিতার মন ইত্যাদি বলে নিজেকে আজ একজন সফল ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছে এবং পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষের প্রতি পরম মমত্ববোধ থেকে তাদের জন্য গড়ে তুলেছেন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অন্যান্য ধরনের সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান।  শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা, সমাজসেবা ও মানবসেবার ক্ষেত্রে আজ হাজী মুহম্মদ মহসিনের মতো একজন উজ্জ্বল মানুষ:  সম্পদবান এবং দানবীর।


প্রায় জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে ওঠা মোস্তাক হোসেনের জীবন ও কর্মের নানাদিক নিয়ে লিখেছেন বিভিন্ন স্বনামধন্য লেখক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিকগণ।  তাদের মধ্যে আছেন: অশোক দাশগুপ্ত, ড. মইনুল হোসেন, কবীর সুমন, আহমদ হাসান ইমরান, জয়ন্ত ঘোষাল, মৌসুমী বিশ্বাস, হারাধন চৌধুরী, ড. রতন ভট্টাচার্য, ড. কুমারেশ চক্রবর্তী, ড. গৌতম নিয়োগী, সমীর ঘোষ, সন্দীপ চক্রবর্তী, সুব্রতা ঘোষ রায়, মনীষা বন্দোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষ রায়, জ্যোতির্ময় রায়, ড. কালাচাঁদ মাহালী, দীপক সাহা, ড. আমজাদ হোসেন, এমদাদুল হক নূর, ড. মীর রেজাউল করিম, কাজী খায়রুল আনাম, ড. মহম্মদ আলি, আবদুল ওদুদ, বজলে মুর্শিদ, আসাদুল্লাহ আল গালিব, সামসুল হুদা আনার, সামিমা মল্লিক, আকমাম খান, মুজতবা আল মামুন, শেখ সাদী মারজান, সৈয়দ রেজাউল করিম, মাহমুদ কামাল, ড. সৈয়দ নুরুর সালাম, তৈমুর খান, মধুবন চক্রবর্তী এবং আরও অনেকেই।

ভূমিকায় পবিত্র সরকার লিখেছেন:
“কিন্তু মোস্তাক হোসেন যদি শুধু একজন শিল্পপতি ও ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তিমাত্র হয়েই থাকতেন তাহলে হয়তো আমি উদার আকাশ-এর  এই বিশেষ সংখ্যার ভূমিকা লেখার জন্য আগ্রহী হতাম না। বা, তারও আগে, উদার আকাশ তাঁকে নিয়ে একটি সংখ্যা প্রকাশ করতে অগ্রসর হত না।
এই দুটি ঘটনাই যে ঘটেছে তার কারণ মোস্তাক হোসেন, তাঁর  সাফল্য ও সমৃদ্ধিকে নিজের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সম্ভোগের সীমায় আবদ্ধ রাখেননি, তিনি তাঁকে সমগ্র মানবসমাজের উপকারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তাঁর নিজের সম্প্রদায়ের শিক্ষাবিস্তারের জন্য তিনি শুরুর দিকে আল-আমীন মিশনের স্কুলগুলির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন উদারভাবে, পরে তা সমস্ত বাঙালিরই জন্য বিস্তারিত হয়েছে। নিজেদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত জিডি অ্যাকাডেমি ও জিডি স্টাডি সার্কেলগুলি সেই লক্ষ্য নিয়ে বিপুল উদ্যমে কাজ করে চলেছে। তা ছাড়া সর্বজনীন চিকিৎসা সেবাতেও তাঁর যোগদান এক উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা এবং বাঙালির পক্ষে সুসংবাদ। লেনিন সরণীর উপর জিডি হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াবেটিস ইন্সটিটিউট চিকিৎসাকেন্দ্রটি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।  হয়তো আমার অগোচরে আরও অনেক জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের পিছনে তাঁর উদ্যোগ ও সমর্থন রয়েছে।   ধনশালীদের এই ধরনের গভীর মানবিক ও সমাজহিতৈষী মুখ অনেক সময়েই স্পষ্ট ব্যতিক্রম, সেজন্যই এ বিষয়ের বিশেষ চর্চা হওয়া বাঞ্ছনীয়।  সমাজের সকলে এগুলি সম্বন্ধে জানলেও সমাজের কল্যাণ হবে।‘’

বাংলাদেশে একশ্রেণির ব্যক্তি/ ধনশালী লোক যখন ব্যাংক লুটপাট, কমিশন আদায়, অমানবিক শ্রমিকশোষণ আর আন্ডার-ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ ও জাতির হাজার হাজার কোটি টাকা হরিলুট ও আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করে চলেছে, তখন আমাদের হাতের কাছের একটি দেশের একজন মানুষ  নিজ পরিশ্রম ও মেধা বলে সৎপথে উপার্জিত অর্থ  সমাজের সামগ্রিক কল্যাণে লাগিয়ে মানবিকতার ও মানবতার উজ্জ্বল উদাহরণ  সৃষ্টি করেছেন। আমাদের দেশে আমরা কবে একজন মোস্তাক হোসেন পাবো???

বিশাল আয়তনের এই বিশেষ সংখ্যাটিতে প্রচুর কবিতা, গল্প, অন্যান্য নানা বিষয়ের নিবন্ধ প্রবন্ধ আছে। আমারও একগুচ্ছ কবিতা ঠাঁই পেয়েছে এই সংখ্যায়। 

সম্পাদক ফারুক আহমেদের সঙ্গে আমার এখনও মুখোমুখি দেখা হয়নি। কিন্তু সেলফোনে কথা হয় মাঝে মাঝে। আর  উদার আকাশ-এর বেশ কিছু সংখ্যা আমার সংগ্রহে আছে। আমি পড়েছি সেসব। তিনি আমার কবিতা নিয়ে গুণীজনদের লেখা একাধিক আর্টিকেল ছেপেছেন, নিজেও লিখেছেন। আমার নিজেরও বেশ কিছু লেখা ছাপানো হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে তাঁর জন্যে আমার একটা বাড়তি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ জন্মেছে। শিল্পপতি ও সমাজসেবক মোস্তাক হোসেনকে কেন্দ্রে রেখে ‘‘উদার আকাশ : ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪৩১’’ প্রকাশের জন্য তাঁর প্রতি আমার ভালোবাসা বাড়লো নতুন করে।

পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণকালে ফারুক আহমেদের কাছ থেকে সংখ্যাটি সংগ্রহ করে আমার জন্যে ১ কপি হাতে করে নিয়ে আমার বাসায় এসেছিলেন লেখক ও সাংবাদিক শেখ সাদী মারজান। আমরা পারিবারিক উঠোনে এটির মোড়ক ও পাঠ উন্মোচন করেছি। শেখ সাদী মারজানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই আবারও। 

উদার আকাশ--এর প্রকাশনা ও জয় অব্যাহত থাকুক-এই কামনা।