*গুনীজন বলেছেন- শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। 

পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্ন থেকে শিক্ষার প্রসার ঘটে আসছে। ছাত্রজীবনে আমরা পড়ে এসেছি- শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধ তৈরি করা। 

কিন্তু আজকালের শিক্ষার মান উন্নয়ন হলেও আমাদের মনের মান কিন্তু উন্নয়ন ঘটেনি। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আমরা শিক্ষিত বলতে বুঝি কয়েকটি সার্টিফিকেট অর্জনকে।

 কিন্তু আমরা আদৗ কি সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পেরেছি। কিংবা যারা শিক্ষার মূল স্তম্ভ শিক্ষক তারা কি তাদের ছাত্রদের সঠিক শিক্ষা দান করতে সক্ষম হচ্ছেন? আজ এমন প্রশ্নের উৎপত্তি ঘটে মূলত পরিমল কিংবা পান্না মাস্টারদের মত শিক্ষক রুপী অসভ্য মানুষদের জন্য। 

আমরা বাঙ্গালী খুব আবেগপ্রবণ জাতি আমরা অন্যান্য জাতিদের চেয়ে মেধাবীও কিন্তু কোথায় জানি আমাদের মনের উন্নতি হয়েও, হয় না। তবে আমরা পারি সেটা সত্য। 

আজ আধুনিক এ সমাজে শিক্ষার প্রচার-প্রসার ঘটেছে ব্যাপক। কিন্তু আজও আমরা অতীতের পুরানো ঘরণা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। 


প্রতিটি অভিভাবক তার সন্তানকে যেদিন স্কুলে ভর্তি করান সেদিনই তার নিজের পছন্দ মত লক্ষ্য সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেন। 




তোমাকে ডাক্তার হতে হবে, তোমাকে ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে, তোমাকে জজ-ব্যারিস্টার হতে হবে এমন অনেক পেশার নাম উল্লেখ্য করে অনেক মা-বাবা তাদের কোমলমতি সন্তানের মনকে নির্দিষ্ট একটা গন্ডির মাঝে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বেধে ফেলে।

 যে কারণে আক্ষরিক অর্থে সঠিক শিক্ষা থেকে কিছুটা হলেও সরে পড়ে সেই কোমলমতি সন্তানটি। আমি এমন অনেক উচ্চ শিক্ষিত লোক দেখেছি যারা লেখাপড়া নিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকগুলো সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন, অনেকগুলো ডিগ্রি অর্জন করেছেন ঠিকই কিন্তু সঠিক মানবিক গুনাবলীতে পরিপূর্ণ হতে পারেননি। 

আমি নিশ্চিত তাদের বাবা-মা হয় তো চেয়েছিলেন সন্তান সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বড় মানুষ হোক। কিন্তু তারা হয় তো চাননি তাদের সন্তান বড় মনের মানুষ হোক কিংবা তারা হয় তো চেয়েছেন তাদের সন্তান সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত হয়ে ভাল মানুষ না হয়ে বড় জব করুক। 

যে কারণে আমাদের আশে-পাশে আনাচে-কানাচে ঘুষ জাতীয় খেলার ছড়াছড়ি। 

বস্তুত আমাদের সমাজে বর্তমানে সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিতের সংখ্যায় আজ অনেক বেশি। আজ আমাদের দেশের প্রতিটি সেক্টরে সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত লোকের অভাব নেই।

 কিন্তু সঠিক শিক্ষা নিয়ে মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধ অর্জনকারী শিক্ষিত লোকের অভাব রয়েছে প্রচুর। 

পৃথিবীর ইতিহাসে যারা তাদের কর্ম দিয়ে পুরো পৃথিবীটাকেই বদলে দিয়েছেলেন তাদের অনেকেই এত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না কিংবা তাদের কোন বড় বড় ডিগ্রি ছিল না। কিন্তু তাদের মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধের শিক্ষা তাদেরকে আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থানে পৌছে দিয়েছে।

 বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অর্থের অভাবে লেখাপড়া করতে পারেননি।

 বাস কন্টাক্টর ছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় অভিনেতা রজনীকান্ত। পৃথিবী বিখ্যাত চিত্রপরিচালক জেমস ক্যামেরুন ছিলেন ট্রাক ড্রাইভার। 

এরকম হাজারও ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে যারা তাদের সততা ও মেধা কাজে লাগিয়ে পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়েছেন, অমর হয়ে আছেন।

 আজ আমরা আমাদের সন্তানকে বড় একটা আধা-মণ ওজনের বস্তা স্বরূপ ব্যাগ দিয়ে স্কুলে পাঠাই শুধু সার্টিফিকেটে নাম্বার পাওয়ার প্রতিযোগিতায়। 

কিন্তু সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সন্তানটি কি মেধা নিয়ে এই পৃথিবীতে আসছে, সেদিকে খেয়াল নেই কোন অভিভাবকের। সন্তানদের জন্য এযুগের সিংহভাগ মা-বাবারা একটা রোবটিক জীবন-যাপন ক্রিয়েট করতে চায়। 

সন্তানের পছন্দকে প্রাধান্য না দিয়ে বাবা-মা’রা নিজেদের পছন্দ চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে চায়। অথচ সন্তান কি চাইছে, কি করতে চাচ্ছে সে কথা শোনার এযুগের বাবা-মাদের বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই। 

যে কারণে সন্তানরা বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজেদের স্বাধীনতা অর্জন করতে অনেক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাতে কিশোর অপরাধ’সহ বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে। তাই বলা যায় আমাদের মূল শিক্ষাটার পাকাপোক্তের উৎপত্তি স্থল পরিবার। 

পরিবার থেকে সঠিক সুশিক্ষাটা সন্তান পেলে সেই সন্তান পথভ্রষ্ট সহজে হতে পারে না।

 আমরা কথায় কথায় বলি ব্যবহার বংশের পরিচয়। সেটাও কিন্তু পরিবারের সাথে রিলেটেড। তাই সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হলে আগে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। যেন সন্তান তার বাবা-মাকে পরমবন্ধু মনে করে এবং বাবা-মা’র উচিত তাদের সন্তানের সকল চাওয়া-পাওয়ার কথাশোনা এবং সন্তানের চাওয়া পাওয়া অনুযায়ী সন্তানকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া ও সহযোগিতা করা। 

তাহলেই সন্তানের ভেতরে মনুষ্যত্ব কাজ করবে এবং হয়ে উঠবে একজন পরিপূর্ণ মানুষের মত মানুষ*।