*মানুষ পশুর নেই ভেদাভেদ এই সমাজের মাঝে!*
*শ্রেষ্ঠ জাতি জন্মে মানুষ কর্মে পশু সাজে!*
*বিবেক জ্ঞানের মানব যখন হিংস্র পশুর কাজে!*
*বনের সকল পশু মিলে ঘোমটা টানে লাজে!*
*বলব কী আর নেই মনে লাজ!*
*অসভ্যতায় হার মেনে যায়,*
*আধুনিক সভ্য সমাজ।।*
*আসলে সত্যি কথা বলতে কি দুর্নীতির বারি ধারা যেন আজ যেন বর্তমান সমাজ জীবনের মৃতুঞ্জয়ী সঞ্জীবনী সুধা। দুর্নীতির ছত্র ছায়ায় শিক্ষা আজ লজ্জায় মুখ লুকিয়ে অন্ধকার যতুগৃহে গুমরে গুমরে মরে । সত্যি দুর্নীতির দৃপ্ত পদচারনা আজ যেন ভগবান বুকে এঁকে দেয় পদ চিহ্ন। দুর্নীতির রক্তাক্ত আঁচড় আজ শিক্ষার টুঁটি চেপে ধরে বক্ষবিদীর্ন করে রক্ত পান করছে। প্রকৃত শিক্ষা আজ দুমড়ে মুচড়ে সংকুচিত হয়ে কোন ক্রমে প্রদীপের সলতের মত ধিকিধিকি করে জীবনের শ্বাস টুকু বয়ে নিয়ে চলেছে।*
*তাইতো কবির ভাষায় বলতে হয়==*
*কিন্তু যতক্ষন দেহে আছে প্রান*
*প্রানপনে এই পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল*
*এ বিশ্বকে শিশুর বাস যোগ্য করে যাব আমি-*
*নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।*
*‘ভারতবর্ষ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’—*আমাদের দাবি। সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে কিন্তু কথাটা মিথ্যা নয়। কিন্তু কেতাবি দাবির সাথে বাস্তবের মিল কতটা? জনসংখ্যার নিরিখে এবং ভারতীয় সংবিধান পৃথিবীর সর্ববৃহৎ লিখিত দলিল হওয়ার কারণেও যদিও দাবিটিকে পত্রপাঠ নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না, কিন্তু ব্যবহারিক ক্ষেত্রে পদে পদে গণতন্ত্র ধর্ষিত হচ্ছে, শুধুমাত্র নিয়মরক্ষার জন্য নিয়মমাফিক পালা করে ভোটপর্ব অনুষ্ঠিত হওয়া ছাড়া। যদিও ভারতীয় সংবিধানের ছত্রে ছত্রে গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি—যার সফল প্রয়োগে ভারতবর্ষ নিশ্চিতভাবে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের শিরোপা পাওয়ারও যোগ্য বটে। কিন্তু নানা বিষয়ে পি.এইচ.ডি. করা বিশিষ্ট আইনজীবী ও শিক্ষাবিদ ভারতের সংবিধানের প্রাণপুরুষ ড. বি. আর আম্বেদকর কি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন তাদের বহুদিনের পরিশ্রমের ফসল ‘'ভারতীয় সংবিধান'' আজ সমাজ সভ্যতা সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই পরিণতি হবে? কাজের পরিধির চুলচেরা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষমতার বিভাজন করে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে যেমন আলাদা করা হয়েছিল, তেমনি আবার কতকগুলি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করার উপায় রেখেছেন সংবিধান প্রণেতাগণ। এগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। যেহেতু গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিরা দেশ শাসন করবেন, তাই নির্বাচনে সকল মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অন্যতম শর্ত। আর এই আদর্শ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটিকে কার্যকর রাখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন থাকাটা খুবই জরুরী। যার সংস্থান রয়েছে ভারতের সংবিধানে। তাইতো ভারতের সবচেয়ে সফল প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার টি. এন. শেষণ বলতে পেরেছেন 'I am the Chief Election Commissioner of India--not of Govt. of India.' অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য, ভারতীয় রাষ্ট্রের কাছে (মানুষের কাছে), ভারত সরকারের কাছে নয়’। শ্রীশেষণ ভারতের নির্বাচন কমিশনকে যে মর্যাদার জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন, অনেকের মেরুদণ্ডহীনতা পরবর্তীকালে তার স্খলন ঘটিয়েছে।*
*সাম্প্রতিক অতীতে দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে, এমনকী বিহারের বিধানসভা নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। কারণ, রাজ্য প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছে। স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনার ভার থেকে রাজ্য সরকারের আধিকারিক ও পুলিশ প্রশাসনের উপর, তারাই নির্বাচন কমিশনের চক্ষু-কর্ণ। যেখানে রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকদের অনেকেই রাজনৈতিক প্রভূদের পদলেহনে নিবেদিত প্রাণ, সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ প্রশাসনের আশাই বৃথা। বর্তমান বাংলায় এই পদলেহন এমন বে-আব্রু পর্যায়ে নেমে এসেছে যা যে কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া দুষ্কর।
ক্ষমতাসীনদের স্বার্থরক্ষা হলে ঘুষকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েও পুলিশ অফিসার চাকুরিতে বহাল থেকে যান। রাজ্যের চিফ সেক্রেটারি কি জানেন না যে নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গের নোটিশের জবাব প্রার্থীকেই দিতে হয়? তাহলে এটা শুধুই কী অজ্ঞতা না ভাবের ঘরে চুরি? তাহলে কি ধরে নিতে হবে সিভিল সার্ভিসের নিয়োগ পদ্ধতিতে গলদ রয়েছে অথবাOrientation training ত্রুটিপূর্ণ? না এটা সার্বিক অবক্ষয়ের ধারা? ১৯৮০ সালে WBCS (Exe) পরীক্ষা পাশ করেও পরিবারের আপত্তিতে ব্যাঙ্ক অফিসারের চাকুরিতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল এখন মনে হচ্ছে। | আমি মনে করি সর্ষের মধ্যে ভূতের নাচানাচি বন্ধ করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আরো কঠোর হতে হবে---প্রয়োজনে নির্বাচনের বিধি পাল্টানোর ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচন ঘোষিত হওয়ার পর পক্ষপাতদুষ্ট শাস্তিপ্রাপ্ত(condemned) কোনও অফিসার তার পুরানো জায়গায় ফিরে যাবেন না এবং শাস্তির ব্যাপারটি সংশ্লিষ্ট অফিসারের সার্ভিস বুকে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে—যা তার পরবর্তী পদোন্নতি ও : নিয়োগের সময় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। এটা করা হলে মেরুদণ্ডহীন অফিসারেরাও আইন লঙ্ঘনের আগে দু’বার ভাববেন। কেননা তাদের পদলেহনের একমাত্র কারণ পদোন্নতির আশা এবং ভাল পোস্টিং। রাজনীতিকে পরিচ্ছন্ন ও গণতন্ত্রের সফল বাস্তবায়নে এ ধরনের দমদমি দাওয়াই খুবই কার্যকর হতে পারে। তবে ভদ্রলোকদের রাজনীতিতে ধরে রাখা ও বিশিষ্টদের রাজনীতিতে আকৃষ্ট করতে হোলে রাজনীতিকে পরিচ্ছন্ন করতেই হবে। একাজে নির্বাচন কমিশনকে ওজনদার নেতা-নেত্রীদের হুমকি অগ্রাহ্য করে আরো কঠোরভাবে নির্বাচন বিধি প্রয়োগ করতে হবে। তবেই সাধারণের পক্ষে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নির্ভয়ে শামিল হওয়া সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে দার্শনিক প্লেটোর একটি উক্তি যা ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী কে.আর. নারায়ণন ৩১ আগস্ট ১৯৮০ সালের রামকৃষ্ণ মিশন আয়োজিত দিল্লির একটি সভায় উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন, ‘অপরিচ্ছন্ন এই অজুহাতে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি অবজ্ঞাভরে অবহেলা করলে সর্বাধিক যে মূল্য দিতে হয়, সেটা হলো নিকৃষ্টতর মানুষ কর্তৃক শাসিত হওয়া। আমরা কি একটি যুগ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি ? গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর মধ্যে আমরা কি এরকম এক স্বৈরাচারী শাসনের আবহ লক্ষ্য করছি না?
কবিগুরুর ‘প্রশ্নের’ কি সফল রূপায়ণ হচ্ছে বাংলায় ? চারিদিকে নাগিনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস কি শান্তির পথরোধ করে দাঁড়িয়ে? দুঃশাসনদের দাপাদাপিতে চারিদিকে ভয়ার্ত পরিবেশ থেকে মুক্তির উপায় কী? দুর্যোধনদের তবু অপরাধবোধ ছিল—দুর্যোধন বলেছিলেন, ‘জানামি ধর্মং ন চ মে প্রবৃত্তি, জানাম্যধর্ম ন চ মে নিবৃত্তিঃ(অর্থাৎ ধর্ম-অধর্ম কী জানি, তবু অধর্মের পথ পরিহার করতে পারছি না)। বর্তমানে অপরাধীরা সব অভিযোগ চক্রান্ত বলে উড়িয়ে দেন। বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা এই ক্রমবর্ধমান অবক্ষয়ের প্রতিবাদ বা সমালোচনা করলে ক্ষমতাবানরা তাদের নোংরা ভাষায় প্রতিআক্রমণ করে সব প্রতিবাদী কণ্ঠকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলছে। তাই আজ সমাজের বিবেক পিতামহ ভীষ্মের ভূমিকায়, তার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু রাজনৈতি নেতা-নেত্রীরা। আর তার একটা কারণ-‘নঙ্গেসে খ দাভী ডরতে হ্যায়।*
*তাহলে উপায় কি ?এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে বর্তমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন করতে হবে।
আমাদের ভাবতেই হবে এই ভারত কাদের ভারত হবে,কয়েকজন বিলিওনেয়ার দের আমোদ ফুর্তির ভারত? না সংখ্যা গরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষের হাঁসি মুখের ভারত। অস্যামের ভারত? না সাম্যের ভারত। মানুষ শোষণের ভারত? না মানব মুক্তির ভারত?
ধর্মীয় হানাহানির ভারত ?না ধর্মনিরপেক্ষ ভারত?যুক্তিহীন,মধ্যযুগীয় তমশায় আচ্ছন্নকারী অপবিজ্ঞান ও ইতিহাস বিকৃতকারীদের ভারত ? না যুক্তিবাদী,মানবতাবাদী,প্রগতিশীল চিন্তা, বিজ্ঞান ভাবনার পতাকা বহনকারীদের ভারত?*
*গণতন্ত্র আজ আক্রান্ত- কি দেশে ,কি রাজ্যে। গণতন্ত্রের অন্তর্জলী যাত্রা শুরু হয়েগেছে। তা রক্ষা করতে হলে সমস্ত অন্যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।*
*আসুন আমরা সবাই সুস্থ ভাবে বাঁচি, সুন্দর ভাবে বিকশিত হই।মনে রাখতে হবে মিথোজীবিতার মাধ্যমেই সমাজ ও সভ্যতার প্রগতিশীল বিবর্তন ঘটে, সভ্যতা পরিপুষ্ট হয়।আমাদের দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম হোক সমস্ত শোষণের বিরুদ্ধে, ধান্দার ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে।
এই সব জিনিসগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নির্দিষ্ট লক্ষণরেখার মধ্যে থেকেই করা যায়।বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইশতেহার পড়ুন ,বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখে বিচার বিশ্লেষণ করুন এবং অভিমুখ ঠিক করুন । তাতে জনগণ বাঁচবে। দেশ বাঁচবে। এটাইএখনকার সময়ের দাবি।*
*সমস্যা থেকে মুখ লুকিয়ে থাকলে বিপদ আরো বর্ধিত আকারে সকলকে আঘাত হানবে। সংঘবদ্ধভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে, প্রয়োজনে প্রতিরোধ। উন্নত মানুষই একটি উন্নত সরকার উপহার দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে জোসেফ মেসট্রোর (ফরাসি দার্শনিক) একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য, একটি জাতি তাদের উপযুক্ত সরকার পায়। গণতন্ত্রে এই ‘উপযুক্ততার বিশাল তাৎপর্য। গণতান্ত্রিক কাঠামোয় মানুষ বিশ্বাস হারালে নেমে আসবে নৈরাজ্য ও অরাজকতা। ভারতীয় গণতন্ত্রের এই সংকটে আপনি-আমি- সকলে ভূমিকা পালন করতে পারি।*
0 Comments