উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হচ্ছে শুক্রবার। তারপর থেকে অফুরন্ত সময় নাফিকের হাতে। রেজাল্ট বের হলে কলেজ জীবন ও ভালবাসার আকাশে জ্বলজ্বল করবে নাফিক। সে এসব ভাবতে থাকে। সে চায় প্রকৃত মানুষ হতে। সমাজের জন্য কিছু করতে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সমাজের কল্যাণে ছোট্ট ছোট্ট কাজ করে সে। রাস্তায় পড়ে-থাকা বিপদ সরিয়ে রাখে নিরাপদ জায়গায়। ইটের টুকরো, কলার খোসা বা ভাঙা কাচের টুকরো, ডাবের খোলা দেখলে সে সরিয়ে রাখে নিরাপদ আশ্রয়ে। আর সময় পেলেই নজরুল-সুকান্ত পাঠাগারে গিয়ে রফিকুল ইসলাম কাকুর সঙ্গে কথা বলে। ঘটকপুকুর হাই স্কুলে পড়তে পড়তেই পাঠাগারের লাইব্রেরিয়ান কাকুকে আপন করে নেয় নাফিক। কত বই আর জ্ঞানের সমুদ্র মনে করে সে লাইব্রেরিয়ান কাকুকে।
মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নাফিক আহমেদ। সে ভালো রেজাল্ট করা ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কলারশিপের ফর্ম জোগাড় করে। সেই ফর্ম পূরণ করে জমাও দিয়ে আসে বিভিন্ন দফতরে। গরিব ছাত্র স্বপন ও নিজামের জন্য বইও কিনে দেয়।
একবার স্কুল জীবনে বাড়ির বিনা অনুমতিতেই কুতুবউদ্দিন গাজীর সঙ্গে চৈতালি প্রেক্ষাগৃহে শাহরুখ খানের "ডর" সিনেমা দেখতে যায় নাফিক। সেই থেকে সে শাহরুখ খানের অভিনয়ের ভক্ত। জাদু তেরি নজর... আম বাগানের ফাঁক-দিয়ে-দেখা দুটো চোখ আজও তাকে বাঁচার আকাশ দেখায়। সে চোখ মূল্যবান তারার চোখ।
বেশ চলছিল স্কুল ও খেলাধুলা। সে শাহরুখ খানের জবরদস্ত ফ্যান হয়ে ওঠে। ঘটকপুকুর স্কুল মাঠে খেলার সমস্ত বন্ধুরাই জানে নাফিক শাহরুখ খান-এর ফ্যান।
সানির সঙ্গে শাহরুখ খান নিয়ে আলোচনা চলে। সানি কলকাতার নামি স্কুলে পড়ে,কলকাতাতেই থাকে। বড় ছুটি পেলেই সে ঘটকপুকুরের বাড়িতে চলে আসে মা-বোনের সঙ্গে। আর তখন নাফিকের সঙ্গে সানির দেখা হয়। খেলার মাঠে। তখন কত গল্প করে দুজনে। শাহরুখ খানের নতুন চলচ্চিত্র নিয়ে তুমুল আলোচনা চলে। ভালো অভিনয় করার জন্য কী কী পুরস্কার পেয়েছে, কোন ছবি সব থেকে বেশি হিট হয়েছে– এইসব নিয়ে।
একাবার সানিদের বাড়ির ছাদে চড়ুই ভাতির আয়োজন আজও ভুলতে পারিনি নাফিক। দিল তো পাগল হে সিনেমার গান শুনতে শুনতে চড়ুই ভাতের আয়োজন মনে দাগ কাটে। মনে পড়ে আজও সেই গান, চাঁদনী কুছ কাহাঁ....রাতনে কুছ শুনা....। মাংসের কি দারুণ টেস্ট হয়ছিল সেদিন।
অন্য দিকে শাহরুখ খান নিয়ে খেলার মাঠে অন্য অনেকেই বেশ মজা করে নাফিককের সঙ্গে।
একবার "সংবাদ প্রতিদিন" পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় শাহরুখ খানের জীবনী পড়ে অনুপ্রেরণা পায় নাফিক। শাহরুখ খান স্কুল জীবন থেকেই খেলাধুলা ও পড়াশোনায় ভালো। নাফিক ভালো পড়াশোনা করে না। সে ভালো খেলাধুলাও করে না।
সেবার নাফিক তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নাম দিয়ে সব খেলায় শেষের দিক থেকে প্রথম হয়। ঘটকপুকুর হাই স্কুল ও গার্লস স্কুল পাশাপাশি হওয়ায় খেলার একটাই মাঠ। নাফিক দৌড়ে সবার পিছনে পড়ে যায়, এতে অনেকেই হাসাহাসি করে। দৌড়ে সবার পিছনে পড়ে যাওয়ার জন্য সে লজ্জাও পায়।
সে ভাবে সে শাহরুখ খানের ভক্ত। আর সবার সামনে হেরে যাবে তা হতে পারে না।
বাড়ি ফিরে সে মাকে সব বললো। তার মায়ের পরামর্শ মতো নিয়মিত সারা বছর সে দৌড় অনুশীলন করলো। পরের বছর নাফিক দৌড়ে প্রথম হলো। বেশ কয়েকটি প্রাইজও পেল। মনে মনে ঠিক করল সে চেষ্টা করলে পড়াশোনাতেও ভালো করতে পারবে। একটা জেদ চেপেছিল তার ভালো রেজাল্ট করতেই হবে।
ক্লাস নাইনে উঠে সে শপথ নিল নিজের মনে, প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে। তাদের স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পড়ে বোদরা হাইস্কুলে। সেবার তার দাদা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। নাফিক তা দেখতে একদিন বোদরা হাইস্কুলে উপস্থিত হলো।
আম বাগানের ফাঁক দিয়ে দেখা সেই চোখের দেখা আবারও পেল।
সে যেন স্বপ্ন দেখছে...
তোমার বিনুনী করা চুলের প্রতিটি খাঁজে খাঁজে অফুরন্ত প্রেম যা ডাকে আমায়। আমার ভালবাসার মেঘ জমে ওঠে... খুঁজে ফিরি প্রতিনিয়ত তোমার মায়াবী চোখের ইশারায় বাঁচার মূলমন্ত্রধ্বনী। তোমার শরীর ও মনের মধ্যে কত জমেছে শিশিরের টুপটাপ ফোঁটা। এক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়েনি কত বছর কত মাস কত দিন তা জানি না। জানি মুখোমুখি হতে পারলে এ জীবন ধন্য। মূল্যবান তারার হৃদয়ে আকাশ প্রেমিক হতে মনের ইচ্ছে অফুরান।
নাফিক তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। একটা ভাঙা-চোরা সাইকেল। গায়ে ঘটকপুকুর চৌমাথার ফুটপাত থেকে কেনা সবুজ রঙের গোলগলা গেঞ্জি। স্কুল যাওয়ার জন্য একটিমাত্র প্যান্ট। তাতে ধুলো লেগে থাকে সবসময়। সেই প্যান্ট আর গেঞ্জি পরেই ছুটে এসেছে বোদরা হাইস্কুল।
আম বাগানের ফাঁক দিয়ে দেখা সেই চোখ তুলনাহীন প্রেম পূর্ণ চাউনি। স্বপ্নের পরীর মতো অপূর্ব সুন্দরী রাজকন্যা মূল্যবান তারা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আসছে। গেটের মুখে দাঁড়িয়ে-থাকা নাফিক তা দেখে চমকে ওঠে। নাফিকের চোখ পড়লো যখন তার চোখে, তখন সে দেখল তার হাতে মোমবাতি পিজবোর্ড কলম রাখার জন্য পেন্সিল বাক্স। বাবরি কাট চুল আর ভুবন জয়ের হাসিতে সে যে কি জাদু, তা শুধু নাফিকই জানে।
এদিকে নাফিকের ভাঙা টালির ছাউনি দিয়ে বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর। ভিজে যায় বিছানার চাদর। মা-আব্বার আশা জাগায় নাফিক। সে নতুন আকাশ দেখার সাহস জোগায়। মূল্যবান তারাকে ছুয়ে আদর করতে মানুষের মতো মানুষ হতে এগিয়ে আসে।
তারা না জানা ভালবাসার জন্য কিছু করে দেখানোর জেদ। বই কলম খাতা নিয়ে সেই যে পড়তে বসা, আজও সে লিখছে, পড়ছে। প্রকৃত মানুষ হতে।
একদিন সে তার ভালবাসার সামনা সামনি হয়ে সব মনের কথা খুলে বলবে।
ভালবাসার যোগ্য হতে সে স্কুল জীবনে দু'টো পরীক্ষাতেই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে।
কলেজ জীবন শেষ করে ভালবাসাকে পাওয়ার জন্য সে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অফিস সেক্রেটারি পদে কাজ জোগাড় করেছে। সে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার দৌড়ে ছুটে চলেছে। শিক্ষামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে নাফিক রাত দিন সোসাইটির কাজে আত্মনিয়োগ করে।
জীবনে চলার পথে জুটেছে কত তাচ্ছিল্যের শেল, কত যন্ত্রণা, তা কেউ বোঝে না। অবজ্ঞার পাহাড় মাথায় নিয়ে আজও পবিত্র ভালবাসার অপেক্ষায় প্রহর গুনে গুনে রাত কাটে দিন কাকে নাফিকের।
ফিরে এসো প্রেসিডেন্সি। মনে পড়ে কলেজ জীবনের ফেলে আসা সেই সব দিন। আর যার অফুরন্ত দোয়ায় প্রথম চাকরি পাওয়া। তবুও তাকে না পাওয়ার সকাল আসে। সূর্য উঠে। তার জন্য খাদহীন প্রেম টলমল করে নাফিকের বুকে।
সে মনে মনে কত কথা বলে-- এই নাও তোমার জন্য উদার আকাশ। বিস্তীর্ণ খোলা মাঠ।
ভাবনার আসমান জুড়ে ভেসে ওঠে এ কার ছবি? কোন ছবি? বেলা অবেলায় এ কোন আত্মশুদ্ধি?
নাফিকের লেখা না পাঠানো খাম। কত সুপ্ত প্রতিভার স্ফূরণ দেখি তোমার অণুপ্রেরণায় মূল্যবান তারা। মনে পড়ে ফেলে আসা দিন। মুষ্টিবদ্ধ হাত জেগে ওঠার আহ্বান। ভালবাসা প্রেমের গান। আইএসএসএন নম্বরের জন্য উৎসাহ দিলে। আবেদন মঞ্জুর ২৩২০-৩৪৯৮। আজও দূর থেকেই ভালবাসা আকাশ স্পর্শ করেছে তবুও মূল্যবান তারার মনে একটুও জায়গা হয়নি নাফিকের।
বসন্তপুরে চাকরি করতে করতে দূর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহিত্য ও ইতিহাস বিভাগে এমএ পাশ করে নাফিক। নিষ্ঠার সঙ্গে বসন্তপুর এডুকেশন সোসাইটির সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করার কাজে মন দেয়। নাফিকের উদ্যোগেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ফুলে ফেঁপে উঠে। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে মডেল স্কুল ও এডুকেশন কলেজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে সব অতীত ইতিহাস মনে পড়ে আজও।
কচি কলাপাতার মতো নরম হাতে হাত, চোখে চোখ রেখে আবারও নাফিকের অগ্নিশপথ। নতুন করে বাঁচার লড়াই। এবার নাফিক তাঁর প্রিয় নায়ক শাহরুখ খানের উপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে ভর্তি হয়েছে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ভুলতে না পারা পাপ-কথন। আকাশ কাড়ার মিছিলে ওরা কারা? ওরা ছুটছে... ওদের বিরামহীন ছুটে-চলা দেখে নাফিক। গর্জে ওঠে বিবেক। রুখে দেওয়ার মিছিলে পথ হাঁটে। বিভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করতে লিখে ফেলে মহান সহিষ্ণু উদার ভারতকথা।
খোলা জানালায় কত মুখ আর মুখের মিছিল।
মার্বেল শীতল টেবিল আর প্রকৃতির মধ্যে আজও খুঁজে ফিরছে আম বাগানের ফাঁক দিয়ে দেখা সেই অপরূপা চোখের ইশারা। মূল্যবান তারা ডাকছে। প্রতিদিন নতুন করে বাঁচতে শেখায় নাফিকের ভালবাসা মূল্যবান তারা। সেই চোখে মুখে ভালবাসা ও বাঁচার আকাশ দেখা শেষ হয় না কখনও। সে স্বপ্ন দেখে। ছবি আঁকে। হঠাৎ করে তার মনের ক্যানভাস জুড়ে ভেসে ওঠে এ কোন ছবি? কার ছবি? বেলা অবেলায় এ কোন আত্মশুদ্ধি?
শেষ চিঠি আজও পোস্ট করতে পারেনি নাফিক। হে আকাশ-চারিণী, মূল্যবান তারা জানো কি? তোমার জন্য এ বুকে আজও আকাশ রাখা। ভালবাসা বেঁচে আছে অনন্ত প্রত্যাশায়। একদিন তুমি আকাশ থেকে নেমে আসবে বাস্তবিক ভালবাসা আদর দিয়ে পূর্ণ করবে নাফিকের আসমান জমিন শূন্যতাবুকে অকাল বসন্ত হয়ে নামবে। সত্যি নাফিক স্বপ্ননে শয়ানে কত আদর দিয়ে রাঙিয়ে রাখে মূল্যবান তারাকে।
বসন্তের বিকেল বেলায় ও ভোরের নিস্তব্ধতায়, পিউকাঁহা পাখির ডাকে আজও ঘুম ভাঙে।
কখনো দেখি তুমি দখিনা হাওয়ায় বিছানা ছেড়ে, শীতের চাদর জড়িয়ে আসো, লাল রঙের সোয়েটার আর কালো শালে শরীর মুড়ে।
পরির মতো রাজকন্যা হয়ে। তখনও আধো ঘুমে, ভাঙা স্বপ্নে লীন হতে হতে হাতড়াতে থাকে মাটি।
লিচু ফুলে মৌমাছি তখনও খুঁজে ফিরছে মধু। অস্থির চোখ দেখি ঘড়ির চঞ্চল কাঁটা ঘুরে ঘুরে কখন হয়েছে সময়ের নদী। ভালবাসা আকাশের মূল্যবান তারা রাজকন্যা তুমি যেন নদীর গুঞ্জরণে প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে আপন মনে গাইছো প্রেমের গান, কল্যাণপুর ষ্টেশনে।
একবার একগুচ্ছ লাল গোলাপ ছাড়াই জানিয়ে ছিলাম 'একুশের বাংলা ভাষায়', সত্যি ভালবাসি তোমায়।
পরীর মতো রাজকন্যা তখন তুমি ঠায় দাঁড়িয়ে, নির্বাক! আকাশের দিকে তাকিয়ে খুঁজছো শিমুল পলাশের মাঝে ভালবাসার রঙ।
নতুন হাতে ড্রাইভিং, কাঁপা কাঁপা হাতে স্টিয়ারিং অপেক্ষায় থাকি। তুমি আসবে আদরহীন কায়া মন ভরিয়ে তুলতে।
ভালবাসার আসমান জুড়ে এ কোন ছবি? কার ছবি? বেলা অবেলায় এ কোন আত্মশুদ্ধি?
নাফিক আবারও সে স্বপ্নের মধ্যে বিড়বিড় করে--তোমার জন্য বিস্তীর্ণ আকাশ।
দিগন্তব্যাপী খোলা মাঠ। হাতে হাত রেখে প্রাণের বাংলা ভাষাতেই জানাই... ভালবাসি তোমায় মূল্যবান তারা নেমে এসো। আপাদমস্তক চেটে দিই পবিত্র হই। লীন হই। এক আত্মায় লীন হতে হতে ভালবাসার সিঁড়ি বেয়ে আকাশে উঠি। মূল্যবান তারা হয়ে জ্বলজ্বল করি।
তোমার জন্য, বাঁচার জন্য, এ বুকে আজও ভালবাসার আকাশ রেখেছি। ভালবাসার জন্য বাঁচো, বাঁচার মতো বাঁচো। অনন্ত ভালবাসা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। আম বাগানের ফাঁক দিয়ে দেখা সেই চোখের ইশারায় ডাকছো আমায়। আমাদের ভালবাসার একটা চুম্বন অপেক্ষায় অপেক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে কখন অপেক্ষালয় হয়েছে জানা হয়নি। এই চোখের দিকে তাকাও। অফুরন্ত সৃষ্টি খেলা করে তোমার চোখে। মেরো না, বাঁচতে দাও।
চেয়ে নাও...মিত্রতা-ভালোবাসা-মনুষ্যত্ব-মানুষ। অবাঞ্ছিত ভেবে ঘৃণা করো না। জেনো অবাঞ্ছিত শুঁয়োপোকা আজও প্রজাপতি হয়।
0 Comments