সেরিনা বেগম,
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইসলামের বাণী প্রচার শুরু করেন তখনকার পরিবেশ সভ্যতা বিকাশের জন্য অনুকূল ছিলনা। টয়েনবির মতে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ সভ্যতা বিকাশের জন্য সহায়ক ছিল না। গোত্র কলহ, অপ্রতুল সম্পদ, কঠিন ভূপ্রকৃতি ইত্যাদির জন্য আয় ও সম্পদ বন্টনে ছিল বৈষম্য। শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা ছিল সামান্য।
সমাজের মধ্যে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক প্রখরতা লক্ষ্য করা যায়নি। পাশাপাশি বাইজান্টাইনের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর মতো বস্তুগত সম্পদেরও অভাব ছিল।
প্রশ্ন হলো কোন সে গুণ যা বেদুইন সমাজে এমনভাবে গুণগত পরিবর্তন শুরু করল তা নিজেদের সমাজের গুণগত পরিবর্তনের সাথে সাথে বলয়ের মধ্যে আগত সমাজগুলোকে ধুয়ে মুছে পরিচ্ছন্ন করেছিল?
টয়েনবী (১৯৫৭),হিট্টি(১৯৫৮),লুইস(১৯৯৫)সহ বহু পণ্ডিতগণ যুক্তি দেখিয়েছেন যে সেদিনের ইসলাম কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি আনতে সক্ষম হয়েছিল।
টয়েনবীর ভাষায় সুপ্ত আধ্যাত্মিক শক্তির বলে ইসলাম নিজেকে বদলে দিয়েছিল এবং ৬শতাব্দী ধরে তার লক্ষ্য সমূহকে আমূল পরিবর্তন করে ফেলেছিল।
প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতা থেকে দ্বাদশ শতকে পাশ্চাত্যের ল্যাটিন সভ্যতার অভ্যুদয় পর্যন্ত সময়কালে ইসলাম ছিল উন্নতির চরম শিখরে এবং ভূমধ্যসাগরীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস তৈরির ক্ষেত্রে ইসলাম অনেক অনেক অবদান রেখেছিল।
(Baeck,1994,p95)
এই উন্নতির জন্য ইসলাম কোন পথে হেঁটেছিল, তার লক্ষ্য সমূহ কেমন ছিল?-
১* ইসলামের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ ছিল মানুষের প্রতি, যারা সমাজের উত্থান পতনের পিছনে মূল শক্তি হিসাবে কাজ করে।
২* ইসলাম মানুষের নৈতিকভাবে ও বস্তুগতভাবে উন্নয়নের প্রয়াস পেয়েছিল।
৩*মানুষের ভুল ত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে আরো ভালো মানুষ রূপে গড়ার প্রয়াস পেয়েছিল।
৪*মানুষকে প্রভাবিত করে এমন প্রতিষ্ঠানসমূহ সংস্কার করতে চেয়েছিল।
৫* মানব জীবনের মধ্যে একটি অর্থ ও লক্ষ্য নিবিষ্ট করে ইসলামের যুগন্তকারী বিশ্ববীক্ষা (worldview)গড়তে সক্ষম হয়েছিল।
এমনভাবেই ইসলামের প্রচেষ্টা সফলতার শীর্ষে আরোহণ করেছিল। মানবতার মুক্তি এনেছিল আর জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছিল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার প্রতিনিধি হিসাবে মানুষকে ইসলাম একে অপরের সাথে মিলনের সীমান্তে পরস্পরের মিলবন্ধনে জুড়ে সমান মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।
তাই তো আমরা অতীতের কথা স্বীকার করে বলি তখন তারা জাত, লিঙ্গ, সহায় সম্পদ ও অবস্থান নির্বিশেষে মানুষকে দান করেছিল মর্যাদা, সমতা ও আত্মমর্যাদা বোধ।
লক্ষ্য করুন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
"এবং আমরা তো একদল সদা সতর্ক"(আল-কুরআন, সূরাহ আশ-শুআরা,২৬:২৭)
অতীতে যারা নির্যাতিত হয়েছিল ও যাদেরকে দুর্বল করা হয়েছিল তাদেরকে নেতৃত্বের আসনে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ইসলাম ও আদর্শকে বাস্তব রূপদান করেছিলেন।
ফিরাউন নিমজ্জিত হল আর মুসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিষ্ঠিত হলেন।
আরো আরো অজস্র দৃষ্টান্ত ইসলামের ইতিহাস ভরে আছে।
আজ গাদ্দারী দূর করে সমগ্র মানব জাতিকে এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে স্রষ্টার সৃষ্টিকে একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করে সোনালী চাদরে মুড়ে সত্যের সভ্যতার মেঘবতী আকাশে স্নিগ্ধতার বরফগলা জলের পরশ বুলিয়ে দিতে আমরা রামধনুর আলোকছটা ছড়িয়ে দিই নীরব পাথরে।
0 Comments