মুহাম্মদ আলি
সম্রাট আওরঙ্গজেব কে মন্দির ধ্বংসকারী হিসাবে সবাই চেনে। কারণ প্রচলিত পাঠ্যপুস্তকে সেভাবেই লেখা হয়েছে। কিন্তু কেন ভেঙেছিলেন তার কারণ পাঠ্যপুস্তকে দেওয়া হয়নি। এটার নামই বিকৃত ইতিহাস। এর সঙ্গে সম্রাট আওরঙ্গজেব যে মসজিদও ধ্বংস করেছিল এটা হয় তো অনেকেই জানে না। তার কারণগুলি আমি একে একে উল্লেখ করবো।
বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের কাহিনি হল এই যে, বাংলা অভিমুখে যাত্রা পথে আওরঙ্গজেব যখন বারাণসীর কাছ দিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর অধীনস্থ হবে হিন্দু রাজারা অনুরোধ করেন যদি একদিন যাত্রা-বিরতি ঘটানো যায় তাহলে রাজমহিষীরা, বারাণসী গিয়ে গঙ্গা স্নান করে প্রভু বিশ্বনাথকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে পারেন।আওরঙ্গজেব সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে যান। বারাণসীর পাঁচ মাইল দূরে সেনা শিবির স্থাপিত হল। মহিষীরা শিবিকারোহনে যাত্রা করলেন। গঙ্গাস্নান সেরে শ্রদ্ধা নিবেদনার্থে তাঁরা গেলেন বিশ্বনাথের মন্দিরে। পূজার্চনা শেষে সবাই ফিরে এলেন। এলেন না শুধু একজন, কচ্ছের মহারাণি। মন্দির এলাকা তন্ন তন্ন করে খোঁজা হল। কিন্তু রাণিকে কোথাও পাওয়া গেল না। এটি আওরঙ্গজেবের গোচরে আনা হলে তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন। রাণির খোঁজে পাঠালেন ঊর্ধ্বতন কর্মচারীদের। শেষ পর্যন্ত তারা দেখতে পান, দেওয়াল সংলগ্ন গণেশ মূর্তিটিকে নাড়ানো যায়। মূর্তি ঘুরিয়ে তাঁরা দেখলেন একগুচ্ছ সিঁড়ি ভূগর্ভ বরাবর চলে গেছে। সভয়ে তাঁরা নিখোঁজ রাণিকে দেখতে পেলেন--- ধর্ষিতা আর ক্রন্দনরতা। ভূতল কক্ষটি বিশ্বনাথের বেদীর ঠিক নীচেই। রাজারা সোচ্চার প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন। অপরাধ যেহেতু জঘন্য অতয়েব তাঁরা দণ্ডযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালেন। আওরঙ্গজেব আদেশ দিলেন, পবিত্র দেবাঙ্গন যেহেতু কলুষিত হয়েছে, অতএব প্রভু বিশ্বনাথ কে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হোক। মন্দির ভূমিস্যাৎ হোক।আর মহান্তকে বন্দি করে শাস্তি দেওয়া হোক।
ড. পট্টভাই সীতারামাইয়া প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ' দ্য ফিদারস য়্যান্ড দ্য স্টোনস' এ এই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। পাটনা মিউজিয়মের প্রাক্তন কিউরেটর ড. পি এল গুপ্ত ও ঘটানাটি সত্য বলে দৃঢ়ভাবে সমার্থন করেন।
ঐতিহাসিকরা সাধারণত আহমেদাবাদের নগরশেঠ নির্মিত চিন্তামন মন্দির ধ্বংসের কথা বলেন। কিন্তু উক্ত আওরঙ্গজেব যে উক্ত নগরশেঠকে শত্রুঞ্জয় ও আবু মন্দিরের জন্য ভূমি দান করেন, তার বেলায় নিশ্চুপ থাকেন।
এবার আসা যাক জামা মসজিদ ধ্বংসের কারণ।
গোলকুণ্ডার শাসণকর্তা, বিখ্যাত তানাশাহ রাষ্ট্রের রাজস্ব সংগ্রহ করে দিল্লিতে তাঁর দেয়া কর আদায় দেননি। কয়েক বছরের মধ্যে তার পরিমান কোটিতে গিয়ে পৌঁছায়। তানাশাহ এই খাজনা মাটিতে পুঁতে তার ওপর জামাআ মসজিদ খাড়া করেন। একথা জানতে পেরে আওরঙ্গজেব মসজিদ ধ্বংসের আদেশ দেন। পুঁতে রাখা খাজনা বাজেয়াপ্ত করা হয়। আর তা জনকল্যাণে ব্যয়িত হয়। বিচারিক রায়ের ক্ষেত্রে আওরঙ্গজেব যে মন্দির ও মসজিদের মধ্যে কোন পার্থক্য করেননি, তা দেখানোর জন্য এই দুটি উদাহরণই যথেষ্ট।
(Islam and Indian Culture
Dr. B.N. pandey page no 46, 47,48,49)
0 Comments