আনসারুল আব্বাস

"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি।"  ( আল-মায়িদাহ:৩,)

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম। এতে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিধান আছে। তাই রাজনীতি বাদ দিয়ে দ্বীন পরিপূর্ণ হতে পারে না। তাই আমাদের আলোচ্য বিষয় রসূল সঃ এর রাজনৈতিক জীবন।
কারণ তিনি আমাদের উত্তম আদর্শ। আমরা জানি রাজনীতি করতেগেলে একটি দল বা সংগঠন থাকতে হয় এবং সেই দলের লক্ষ্য এবং কার্যক্রম থাকা প্রয়োজন হয়। রসূল সঃ এর যুব বয়স থেকেই তিনি সামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে ছিলেন। তিনি হিলফুল ফুজুল বা সেব সংঘ প্রতিষ্ঠা করে ছিলেন। যা প্রধান লক্ষ্য ছিল মানুষের সেবা করা বা কল্যাণ করা। মানুষের মনে পরিবর্তন ঘটানো। এবং জাহিলিয়াত বা অন্ধকার যুগের অবসান ঘটানো।

রসূল সঃ এর দল

যারা আবু লাহাব, আবু জাহিলদের নেতৃত্ব অস্বীকার করে,  কলেমা পাঠ করে ইমান এনেছে তারা সবাই রসূল সঃ এর দলের লোক। রসূলে করিম সঃ তাঁর দলের কর্মী দের প্রথম তাজকিয়ার মাধ্যমে তাদের সৎ ও আল্লাহ ভিরু করে জীবনকে পবিত্র করেছিলেন। যা পবিত্র কুরআন উল্লেখ আছে সূরা জুমুআ-২ নং আয়াতে-

 "তিনিই মহান সত্তা যিনি উম্মীদের মধ্যে তাদেরই একজনকে রসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে তাঁর আয়াত শুনায়, তাদের জীবনকে সজ্জিত ও সুন্দর করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়।"
অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল সঃ তাঁর সংগঠনের কর্মীদের কুরআনে আয়াত পড়ে শোনান আয়াতের শিখিয়েদিতেন। কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন যাপনের হিকমত শিক্ষা দেন ও কুরআন শিক্ষা বিরোধী  সব কিছু থেকে তাদের জীবনকে পবিত্র করেন।



  আল্লাহ রসূল সঃ তাঁর সংগঠনের কর্মীদের তাজকিয়ার মাধ্যমে এমন ভাবে তৈরি করেছিলেন যে চরিত্র ও নৈতিকতার দিক থেকে তারা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দলে পরিণত হয়েছিল।  যা উল্লেখ আছে পবিত্র কুরআনে সূরা আল ইমরানের ১১০ নং আয়াতে " এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল।" 

রাষ্ট্র ক্ষমতা আল্লাহর দান

বলোঃ হে আল্লাহ! বিশ্ব–জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও। যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্ছিত ও হেয় করো। কল্যাণ তোমার হাতেই নিহিত। নিঃসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।(সূরা আলে-ইমরান:২৬,)

সর্বশক্তিমান আল্লাহপাক মুমিনদের খেলাফত দান করেন দুটি শর্ত পূরণের মাধ্যমে যা পবিত্র কুরআনে সূরা নূর এর ৫৫ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে-"
আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন,।"
    
  আল্লাহ রসূল সঃ একদল ইমানদার ও সৎ কর্মশীল লোক তৈরি করায় মদীনাতে মহান আল্লাহ পাক নবী করীম সঃ কে খেলাফত বা রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছিলেন।

আমরা নবী মুহাম্মদ সঃ নবুয়ত জীবন কে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। এক মক্কা জীবন ও মাদানী জীবন। মক্কায় তিনি নবুয়তের ১৩ বছর এবং মদিনায় তিনি ১০ বছর কাটিয়ে ছিলেন। মদিনা জীবনে তিনি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এবং কুরআনের একের পর এক আইন সম্পর্কিত আয়াত তিনি রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।  রাষ্ট্র না থাকলে আইন প্রতিষ্ঠা করা কখনই সম্ভব হতো না। তাই মক্কা জীবনে আইন সম্পর্কিত কোন আয়াত আল্লাহ নাজিল করে নি। কারণ রাষ্ট্র না থাকলে আইন প্রতিষ্ঠা কখনই সম্ভব নয়। 

রাসূল সঃ এর রাষ্ট্রের ভিত্তি ঃ

"আমি আমার রসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং হিদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছি। তাদের সাথে কিতাব ও মিযান নাযিল করেছি যাতে মানুষ ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আর লোহা নাযিল করেছি যার মধ্যে বিরাট শক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে। এটা করা হয়েছে এজন্য যে, আল্লাহ জেনে নিতে চান কে তাঁকে না দেখেই তাঁকে ও তাঁর রসূলদেরকে সাহায্য করে। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ অত্যন্ত শক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।( সূরা আল-হাদীদ:২৫,)
রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হলো ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। প্রথমত  ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন  কিতাব। যা সকল রসূলগণের প্রতিই  নাযিল করেছেন। দ্বিতীয়ত  মীযান বা কিতাবের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যাখ্যা। রসূল সঃ রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন কিতাব বা কুরআন দিয়েই।  মহান আল্লাহর ঘোষণা 

"তারপর হে মুহাম্মাদ! তোমাদের প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যা সত্য নিয়ে এসেছে এবং আল কিতাবের মধ্য থেকে তার সামনে যা কিছু বর্তমান আছে তার সত্যতা প্রমাণকারী ও তার সংরক্ষক। কাজেই তুমি আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী লোকদের বিভিন্ন বিষয়ের ফায়সালা করো এবং যে সত্য তোমার কাছে এসেছে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না।--তোমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি শরীয়াত ও একটি কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে রেখেছি। " (আল-মায়িদাহ:৪৮)


রসূল সঃ এর শাসন-নীতি

ইতিপূর্বে কোরআন মাজীদের যে রাজনৈতিক শিক্ষা বর্ণিত হয়েছে তা বাস্তবে রূপায়িত করাই ছিল রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর কাজ। তাঁর নেতৃত্বে ইসলামের অভ্যূদয়ের পর যে মুসলিম সমাজ অস্তিত্ব লাভ করে এবং হিজরতের পর রাজনৈতিক শক্তি অর্জন করে তা যে রাষ্ট্রের রূপ গ্রহণ করে, তার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল কুরআন মজীদের রাজনৈতিক শিক্ষার ওপর ইসলামী শাসন ব্যবস্থার নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য তাকে অন্যান্য শাসন ব্যবস্থা থেকে পৃথক করে।

এ রাষ্ট্রের প্রথম মূলনীতি ছিল এই যে,
এক
 একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সার্বভৌমত্বের অধিকারী এবং ঈমানদারদের শাসন হচ্ছে মূলতঃ খেলাফত বা আল্লার প্রতিনিধিত্বশীল শাসন। কাজেই বলগাহীন ভাবে কাজ করার তার কোন অধিকার নেই। বরং আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাতের উৎস থেকে উৎসারিত আল্লাহর আইনের অধীনে কাজ করা তার অপরিহার্য কর্তব্য। কুরআন মজীদের যেসব আয়াতে এ মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে আগের অধ্যায়ে আমরা তা উল্লেখ করেছি। তন্মদ্ধে বিশেষ করে নিম্নোক্ত আয়াতগুলো এ ব্যাপারে একান্ত স্পষ্টঃ

(আন-নিসাঃ ৫৯, ৬৪, ৬৫, ৮০, ১০৫; আল-মায়েদাঃ ৪৪, ৪৫, ৪৭; আল-আরাফঃ ৩; ইউসুফঃ ৪০; আন-নূরঃ ৫৪, ৫৫; আল-আহযাবঃ ৩৬ এবং আল-হাশরঃ ৭।)

দুইঃ আদল-সকল মানুষের প্রতি সুবিচার

দ্বিতীয় যে মুলনীতির ওপর সে রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল, তা ছিল এ কুরআন-সুন্নার দেয়া আইন সকলের জন্য সমান, রাষ্ট্রের সামান্যতম ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র প্রধান পর্যন্ত সকলের উপর তা সমভাবে প্রয়োগ করা উচিত। তাতে কারো জন্য কোন ব্যতিক্রমধর্মী আচরণের বিন্দু মাত্র অবকাশ নেই। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে এ কথা ঘোষণা করার নির্দেশ দিচ্ছেনঃ

-এবং তোমাদের মধ্যে আদল-সুবিচার কায়েম করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

-হজরত মুহাম্মদ সঃ  বলেন।
তোমাদের পূর্বে যেসব উম্মাত অতিক্রান্ত হয়েছে, তারা এ জন্য ধ্বংস হয়েছে যে, নিম্ন পর্যায়ের অপরাধীদেরকে আইন অনুযায়ী শাস্তি দান করতো, আর উচ্চ পর্যায়ের অপরাধীদেরকে ছেড়ে দিতো। সে সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ নিহিত, (মুহাম্মাদের আপন কন্যা) ফাতেমাও যদি চুরি করতো, তবে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে ফেলতাম। [বুখারী, কিতাবুল হুদূদ, অধ্যায়ঃ ১১-১২]

তিনঃ মুসলমানদের মধ্যে সাম্য
এ রাষ্ট্রের তৃতীয় মূলনীতি ছিল, বংশ-বর্ণ-ভাষা এবং দেশ-কাল নির্বিশেষে সকল মুসলমানের অধিকার সমান। এ রাষ্ট্রের পরিসীমায় কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠি, দল, বংশ বা জাতি কোন বিশেষ অধিকার লাভ করতে পারে না।

-মুমিনরা একে অন্যের ভাই। -আল-হুজুরাতঃ ১০

-হে মানব মন্ডলী। এক পুরুষ এবং নারী থেকে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদেরকে নানা গোত্র, নানা জাতিতে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো। মূলত আল্লার নিকট তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী সম্মানার্হ, যে সবচেয়ে বেশী আল্লাকে ভয় করে। -আল-হুজরাতঃ১৩

চারঃ সরকারের দায়িত্ব ও জবাবদিহি

এ রাষ্ট্রের চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি ছিল, শাসন কর্তৃত্ব এবং তার ক্ষমতা-ইখতিয়ার ও অর্থ-সম্পদ আল্লাহ এবং মুসলমানের আমানত। আল্লাভীরু, ঈমানদার ও ন্যায়পরায়ণ লোকদের হাতে তা ন্যাস্ত করা উচিত। কোন ব্যক্তি নিজের ইচ্ছামত বা স্বার্থবুদ্ধি প্রোণোদিত হয়ে এ আমানতে খেয়ানত করার অধিকার রাখে না। এ আমানত যাদের সোপর্দ করা হবে তারা এজন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য। আল্লাহ তয়ালা কুরআন মাজীদে বলেনঃ

আমানত বহনের যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে আমানত সোপর্দ করার জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন। আর যখন মানুষের মধ্যে ফায়সালা করবে। ন্যায়নীতির সাথে ফায়সালা করবে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালো উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও দেখেন।

রসূল সঃ বলেন
-সাবধান। তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় নেতা-যিনি সকলের ওপর শাসক হন-তিনিও দায়িত্বশীল তাঁকেও তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। [বুখারী, কিতাবুর আহকাম, অধ্যায়-১। মুসলিম, কিতাবুল এমারত, অধ্যায়-৫।]

পাঁচঃ শুরা বা পরামর্শ

“কাজ-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর। কোন বিষয়ে তোমার মত সুদৃঢ় হয়ে গেলে আল্লাহর ওপর ভরসা কর।” – আলে ইমরান : ১৫৯

তাদের সামষ্টিক কাজ-কর্মে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়। ” -আশ শুরা : ৩৮

ছয়ঃ ভাল কাজে আনুগত্য

-একজন মুসলমানের ওপর তার আমীরের আনুগত্য করা-শোনা এবং মেনে চলা-ফরয; তা তার পছন্দ হোক বা না হোক, যতক্ষণ তাকে কোন মাসিয়াত-পাপাচারের নির্দেশ না দেয়া হয়। মাসিয়াত-এর নির্দেশ দেয়া হলে কোন আনুগত্য নেই। [বুখারী, কিতাবুল আহকাম, অধ্যায়-৪। মুসলিম, কিতাবুল এমারত, অধ্যায়-৮। আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ, অধ্যায়-৯৫। নাসায়ী, কিতাবুল বায়আত, অধ্যায়-৩৩। ইবনে মাজা, আবওয়াবুল জিহাদ, অধ্যায়-৪০।]

সাতঃ পদ-মর্যাদার দাবী এবং লোভ নিষিদ্ধ

-আখেরাতের ঘর আমি তাদেরকে দেবো, যারা যমীনে নিজের মহত্ব খুজে বেড়ায় না, বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। -আল-কাসাসঃ ৮৩

-আল্লার শপথ, এমন কোন ব্যক্তিকে আমরা এ সরকারের পদ মর্যাদা দেই না, যে তা চায় এবং তার জন্য লোভ করে। [বুখারী, কিতাবুল আহকাম, অধ্যায়-৭। মুসলিম, কিতাবুল এমারাত, অধ্যায়-৩]

আটঃ রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য

মহান আল্লাহর ঘোষণা 
"এরা এমন সব লোক যাদেরকে আমি যদি পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করি তাহলে এরা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ কাজে নিষেধ করবে। আর সমস্ত বিষয়ের পরিণাম আল্লাহর হাতে। " (আল-হাজ্জ:৪১), রাসূল সঃ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে উপরি উক্ত কাজ গুলি রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করেন।

– এমনি করে আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মাত (বা ভারসাম্যপূর্ণ পথে অবিচল উম্মাত) করেছি, যেন তোমরা লোকদের ওপর সাক্ষী হও আর রাসূল সাক্ষী হন তোমাদের ওপর। – আল-বাকারাঃ ১৪৩।

– ঈমানদাররা! তোমরা সকলে ন্যায় বিচারে অটল-অবিচল থাকো এবং আল্লার জন্য সাক্ষ্যদাতা হও- তোমাদের সাক্ষ্য স্বয়ং তোমাদের নিজেদের বা তোমাদের পিতা-মাতা বা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে যাক না কেন।
(সূরা নিশা  আয়াত ১৩৫)

 রসূল সঃ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঐশী বানীর মাধ্যমে পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিধান অবর্তীণ হতে থাকে এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগনের মাঝে তা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রসূল সঃ মদিনায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম মসজিদ নির্মান করেন। তার বাজার তৈরি করেন। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের জন্য বেশকিছু সমাজে ক্ষতিকর ব্যবস্থা আইন করে নিষেধ করেন।

মাদকা শক্তি ও মাদক দ্রবের উচ্ছেদ 

 ৫: আল-মায়িদাহ:৯০,
হে ঈমানদারগণ! এ মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকলাপ। এগুলো থেকে দূরে থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে।

বোখারী, মুসলিম, হজরত আনাস রাঃ হতে বর্নিত,  বিশ্বনবি সাঃ  লাঠি ও জুতার দ্বারা মদ্যপানের অপরাধে প্রহার করতেন।অনেক সময় তার সাথে চল্লিশ বেত্রাঘাত মারতেন।

সুদ নিষিদ্ধকরণ 
__________________
২: আল-বাক্বারাহ:২৭৮,

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও, যদি যথার্থই তোমরা ঈমান এনে থাকো।

২: আল-বাক্বারাহ:২৭৯,

"কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটা আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।"

রসূল সঃ  সুদ গ্রহীতা, সুদ দাতা, সুদ  সংক্রান্ত মামলার লেখক ও সুদের স্বাক্ষী সকলের  ওপর  লানত করেছেন।

চুরি ও ডাকাতির শাস্তি
___________________

৫: আল-মায়িদাহ:৩৮,

চোর-পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন, উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কর্মফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আল্লাহর শক্তি সবার ওপর বিজয়ী এবং তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ।
হজরত মুহাম্মদ সঃ বলেন যদি তাঁর কন্যা ফাতিমা ও চুরি করে তবে তার হাত কাটা যাবে।

ব্যভিচার নিষিদ্ধ করেন।

২৪: আন্-নূর:২,

ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী উভয়ের প্রত্যেককে এক শত বেত্রাঘাত করো। আর আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি কোন মমত্ববোধ ও করুণা যেন তোমাদের মধ্যে না জাগে যদি তোমরা আল্লাহ‌ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনো। আর তাদেরকে শাস্তি দেবার সময় মু’মিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে।

এই ভাবে হজরত মুহাম্মদ সঃ মানব কল্যাণে একাধিক আইন জারি করে। একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

বিশ্ব নেতা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিদায় হজ্বের ভাষণ:-

“উপস্থিত মানব মন্ডলী! 
•আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো। হয়তো আমি আর কখনো এখানে তোমাদের সঙ্গে একত্রিত হতে পারব না।

হে মানব মন্ডলী! 
•আজকের এই দিন (জুমার দিন), এই মাস (জিলহজ মাস) ও এই শহর (মক্কা) যেমন পবিত্র; তোমাদের জানমাল, ইজ্জত-আবরু, মান-সম্মান কিয়ামত পর্যন্ত এমনই পবিত্র। 
•কারো কাছে যদি কোনো আমানত রক্ষিত থাকে, তাহলে সে যেন তা আমানতকারীর কাছে পৌঁছে দেয়। আজ থেকে সব ধরনের সুদ রহিত করা হলো। তোমাদের কেবল মূলধনের ওপর অধিকার রইল। 
•তোমরা অন্যের ওপর অত্যাচার করবে না, নিজেরাও অত্যাচারিত হবে না। সর্বপ্রথম আমি হজরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সুদ রহিত করছি। অন্ধকার যুগের সব কৌলীন্য বিলুপ্ত করা হলো। শুধু কাবাঘরের তত্ত্বাবধান ও হাজিদের পানি পান করানো ছাড়া। 
•আজকের পর তোমাদের ভূখণ্ডে শয়তানের উপাসনার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু ব্যাপার, যেগুলোকে তোমরা বড় পাপ মনেই করো না। তার অনুসরণ করলে শয়তান খুশি হবে। 

হে মানব মন্ডলী! 
•তোমাদের নিজ স্ত্রীদের ওপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তদ্রূপ তাদেরও তোমাদের ওপর অধিকার রয়েছে। স্ত্রীদের ওপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা যেন নিজ স্বামী ছাড়া পরপুরুষের সঙ্গে ভোগে লিপ্ত না হয়। যদি তারা তা করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের তাদের প্রতি কঠোরতা করার অনুমতি দিয়েছেন। এমতাবস্থায় তোমরা তাদের শয্যা পৃথক করে দেবে। এবং মৃদু প্রহার করবে। তাতে তারা বিরত হলে নিয়মমাফিক তাদের ভরণপোষণের প্রতি লক্ষ রাখবে। স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। তারা তোমাদের সাহায্যকারিণী। তোমরা তাদের আল্লাহর নির্ধারিত কালিমা বাক্যের (ইজাব-কবুল) মাধ্যমে নিজেদের জন্য হালাল করেছো। সুতরাং তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো। 

হে মানব মন্ডলী! 
•সব মুমিন পরস্পর ভাই ভাই। কারো জন্য অন্যের সম্পদ বৈধ নয়। তবে যদি কেউ স্বেচ্ছায় কাউকে কিছু দেয়, তাহলে সেটা স্বতন্ত্র ব্যাপার। আমার পর তোমরা কুফরিতে ফিরে যেও না। পরস্পর খুনাখুনি করো না। 
•আমি তোমাদের মাঝে এমন দুটি জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে কখনো বিভ্রান্ত হবে না। তা হচ্ছে_আল্লাহর কিতাব (পবিত্র কোরআন) ও তাঁর রাসুলের সুন্নাহ। 

হে মানব মন্ডলী! 
•তোমাদের প্রভু একজন। তোমাদের পিতাও একজন। তোমরা সবাই আদম থেকে আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। তোমাদের মাঝে যারা সর্বাধিক মুত্তাকি, খোদাভীরু তারাই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান। তাকওয়া ছাড়া কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। 

হে মানব মন্ডলী!  
•আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। উত্তরাধিকারীর জন্য কোনো ওসিয়ত প্রযোজ্য নয়। অন্যদের জন্য এক-তৃতীয়াংশের অধিক ওসিয়ত করা বৈধ নয়। 

•আমাদের কিয়ামত দিবসে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমাদেরও জিজ্ঞাসা করা হবে। তখন তোমরা আমার ব্যাপারে কী বলবে? আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌছে দিয়েছি? উপস্থিত সাহাবায়েকেরাম উত্তর দিলেন, আমরা সাক্ষ্য দেব যে আপনি আপনার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছেন। হিত কামনা করেছেন। অতঃপর রাসুল (সা.) আকাশের দিকে হাত তুলে তিনবার বললেন, আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন। তারপর বললেন, তোমরা এখানে যারা উপস্থিত আছো তারা অনুপস্থিতদের কাছে (কথাগুলো) পৌঁছে দেবে।”

(রেফারেন্স- সহিহ মুসলিম, তিরমিজি, সুনান আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, সুনান ইবনে মাজাহ গ্রন্থে উল্লেখিত যাবির ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণিত বিদায় হজ্বের ভাষণের উপরোক্ত বর্ণনা পাওয়া যায়)

সহিহ মুসলিমের বর্ণনাটি নিম্নরূপঃ-

“হে মানব মন্ডলী!

•তোমরা হৃদয়ের কর্ণে ও মনোযোগ সহকারে আমার বক্তব্য শ্রবণ কর। আমি জানিনা, আগামী বছর এ সময়ে, এ- স্থানে, এ-নগরীতে সম্ভবত তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ আর হবে কি না। 

“হে মানব সকল! 
•সাবধান! সকল প্রকার জাহেলিয়াতকে আমার দুপায়ের নিচে পিষ্ঠ করে যাচ্ছি। নিরাপরাধ মানুষের রক্তপাত চিরতরে হারাম ঘোষিত হল। প্রথমে আমি আমার বংশের পক্ষ থেকে রবিয়া বিন হারেস বিন আবদুল মোত্তালিবের রক্তের দাবী প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। সে বনি লাইস গোত্রে দুধ পান করেছে, হুযাইল তাকে হত্যা করেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে ’সুদ’ কে চির দিনের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। আমি আজ আমার চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মোত্তালিবের যাবতীয় সুদের দাবী প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। 

হে লোক সকল! 
•বল আজ কোন দিন? সকলে বলল “আজ মহান আরাফার দিন, আজ হজ্বের বড় দিন” সাবধান! তোমাদের একের জন্য অপরের রক্ত তার মাল সম্পদ, তার ইজ্জত-সম্মান আজকের দিনের মত, এই হারাম মাসের মত, এ সম্মানিত নগরীর মত পবিত্র আমানত। সাবধান! মানুষের আমানত প্রকৃত মালিকের নিকট পৌঁছে দেবে। 

হে মানব সকল! 
•নিশ্চয়ই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ একজন, তোমাদের সকলের পিতা হযরত আদম (আঃ)। আরবের উপর অনারবের এবং অনারবের উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সাদার উপর কালোর আর কালোর উপর সাদার কোন মর্যাদা নেই। ‘তাকওয়াই’ শুধু পার্থক্য নির্ণয় করবে। 

হে লোক সকল! 
•পুরুষদেরকে নারী জাতীর উপর নেতৃত্বের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তবে নারীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় কর। নারীদের উপর যেমন পুরুষদের অধিকার রয়েছে তেমনি পুরুষদের উপর রয়েছে নারীদের অধিকার। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর জামিনে গ্রহণ করেছ। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে নারীরা স্বামীর গৃহে ও তার সতীত্বের মধ্যে অন্য কাউকেও শরিক করবেনা, যদি কোন নারী এ ব্যপারে সীমা লংঘন করে, তবে স্বামীদেরকে এ ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে যে, তারা স্ত্রীদের থেকে বিছানা আলাদা করবে ও দৈহিক শাস্তি দেবে, তবে তাদের চেহারায় আঘাত করবে না। আর নারীগণ স্বামী থেকে উত্তম ভরণ পোষণের অধিকার লাভ করবে, তোমরা তাদেরকে উপদেশ দেবে ও তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করবে। 

হে উপস্থিতি! 
•মুমিনেরা পরষ্পর ভাই আর তারা সকলে মিলে এক অখন্ড মুসলিম ভ্রাতৃ সমাজ। এক ভাইয়ের ধন-সম্পদ তার অনুমতি ব্যতিরেকে ভক্ষণ করবে না। তোমরা একে অপরের উপর জুলুম করবেনা। 

হে মানুষেরা! 
•শয়তান আজ নিরাশ হয়ে পড়েছে। বড় বড় বিষয়ে সে তোমাদের পথ ভ্রষ্ট করতে সমর্থ হবে না, তবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা সর্তক থাকবে ও তার অনুসারী হবেনা। তোমরা আল্লাহর বন্দেগী করবে, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, যাকাত আদায় করবে ও তোমাদের নেতার আদেশ মেনে চলবে, তবেই তোমরা জান্নাত লাভ করবে। 

সাবধান! 
•তোমাদের গোলাম ও অধীনস্তদের বিষয়ে আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর। তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খেতে দেবে। তোমরা যা পরবে তাদেরকেও সেভাবে পরতে দেবে। 

হে লোক সকল! 
•আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহ তা’আলার পয়গাম পৌছে দিয়েছি? লোকেরা বলল, “হ্যা” তিনি বললেন “আমার বিষয়ে তোমাদের জিঞ্জাসা করা হবে, সে দিন তোমরা কি সাক্ষ্য দিবে, সকলে এক বাক্যে বললেন, “আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি আমাদের নিকট রিসালাতের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছেন, উম্মতকে সকল বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন, সমস্ত গোমরাহির আবরণ ছিন্ন করে দিয়েছেন এবং অহীর আমানত পরিপূর্ণ ভাবে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন” অত:পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজ শাহাদাত আঙ্গুলি আকাশে তুলে তিনবার বললেন, “হে আল্লাহ তা’আলা আপনি সাক্ষী থাকুন, আপনি স্বাক্ষী থাকুন, আপনি সাক্ষী থাকুন”। 

হে মানুষেরা! 
•আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সম্পদের মিরাস নির্দিষ্টভাবে বন্টন করে দিয়েছেন। তার থেকে কম বেশি করবেনা। 

সাবধান! 
•সম্পদের তিন ভাগের এক অংশের চেয়ে অতিরিক্ত কোন অসিয়ত বৈধ নয়। 
•সন্তান যার বিছনায় জন্ম গ্রহণ করবে, সে তারই হবে। ব্যভিচারের শাস্তি হচ্ছে প্রস্তরাঘাত। (অর্থাৎ সন্তানের জন্য শর্ত হলো তা বিবাহিত দম্পতির হতে হবে। ব্যভিচারীর সন্তানের অধিকার নেই)। 
•যে সন্তান আপন পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা এবং যে দাস নিজের মালিক ব্যতীত অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে, তাদের উপর আল্লাহ তা’আলা, ফেরেশতাকুল এবং সমগ্র মানব জাতির অভিশাপ এবং তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল হবে না। 

হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকেরা! 
•তোমরা দুনিয়ার মানুষের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন কিয়ামতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ না কর। কেননা আমি আল্লাহর আযাবের মোকাবিলায় তোমাদের কোন উপকার করতে পারবো না। তোমাদের দেখেই লোকেরা আমল করে থাকবে। 

মনে রেখ! 
•সকলকে একদিন আল্লাহ তা’আলার নিকট হাজির হতে হবে। সে দিন তিনি প্রতিটি কর্মের হিসাব গ্রহণ করবেন। তোমরা আমার পরে গোমরাহিতে লিপ্ত হবে না, পরস্পর হানাহানিতে মেতে উঠবনা। 

•আমি আখেরী নবী, আমার পরে আর কোন নবী আসবেনা। আমার সাথে অহীর পরিসমাপ্তি হতে যাচ্ছে। 

হে মানুষেরা! 
•আমি নিঃসন্দেহে একজন মানুষ। আমাকেও আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে। আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি যতদিন তোমরা এই দুটি বস্তু আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা নিঃসন্দেহে পথভ্রষ্ট হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব ও অপরটি রাসূলের (সঃ) সুন্নাহ। 

হে মানব মন্ডলী! 
•তোমরা আমির বা নেতার আনুগত্য করো এবং তার কথা শ্রবণ করো যদিও তিনি হন হাবশী ক্রীতদাস। যতদিন পর্যন্ত তিনি আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করেন, ততদিন অবশ্যই তাঁর কথা শুনবে, তাঁর নির্দেশ মানবে ও তাঁর প্রতি আনুগত্য করবে। আর যখন তিনি আল্লাহর কিতাবের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করবে, তখন থেকে তাঁর কথাও শুনবেনা এবং তাঁর আনুগত্যও করা যাবেনা। 

সাবধান! 
•তোমরা ধর্ম সম্বন্ধে বাড়াবাড়ি করবে না।
নিজের ধর্ম অন্য ধর্মের লোকের উপর চাপিয়ে দেবে না,
এই অতিরিক্ততার ফলে তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।তোমরা ধর্মভ্রষ্ট হয়ে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া ও রক্তপাতে লিপ্ত হয়ো না।তোমরা ভুলে যেয়ো না যে, তোমরা পরস্পর পরস্পরের ভাই।
•আবার বললেন, আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌছে দিয়েছি? সকলে বললেন, “নিশ্চয়ই”। হে উপস্থিতগণ! অনুপস্থিতদের নিকট আমার এ পয়গাম পৌছে দেবে। হয়তো তাদের মধ্যে কেউ এ নসিহতের উপর তোমাদের চেয়ে বেশী গুরুত্বের সাথে আমল করবে। “তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক” বিদায়।