বর্তমান যুবসমাজ আজ পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেমে ব্যস্ত। কেউ বা টিক টক, কেউ ফেসবুকে, কেউ ম্যাসেনঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এ অবৈধ চ্যাটিং এ ব্যস্ত। কেউ বা মোবাইল এ গার্লফ্রেণ্ড এর সঙ্গে কথায় ব্যস্ত। কেউ আই পি এল খেলায়, কেউ বা মেলায়, অথবা কেউ অশ্লীল পর্ণ সিনেমা,সিরিয়াল, অশ্লীল গান বাজনা, নিত্য নিয়ে ব্যস্ত। এর সাথে নেশা দ্রব্য জিনিস গুটখা, খয়নি, পান,বিড়ি, সিগারেট, মদ, গাঁজা প্রভৃতি নেশায় ডুবে আছে। যার পরিনতি খুন ধর্ষণ ইভটিজিং প্রভৃতি বেড়ে চলেছে।
যে যুব সমাজ ছিল সভ্যতার মূলচালিকা শক্তি। সমাজকে সুন্দর ভাবে গড়ে তোলা ছিল তাদের দায়িত্ব। আজ সেই যুব সমাজ এই ভ্রান্ত পথে পা বাড়িয়েছে। তারা জ্ঞান -বিজ্ঞান, ও নৈতিকতা চর্চার বাদ দিয়ে অপসংস্কৃতিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ফলে আমাদের দেশ তথা সমাজ ভয়ংকর ক্ষতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই এই যুব সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমাদের সুশীল সমাজের মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।
পবিত্র কুরআনে যুবসমাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে
আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তিনি (মুসা আলাইহিস সালাম) যখন পূর্ণ যৌবনে পৌছিলেন, তখন তাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করলাম।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৪)
আসহাবে কাহাফের ৭ ব্যক্তিও ছিল যুবক। যারা এক আল্লাহর ইবাদতে বিশ্বাসী ছিলেন। যাদেরকে শত্রুর হাত থেকে আল্লাহ তাআলা রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন যুবকেরা পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করে তখন দোয়া করে- হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে (তোমার) নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের কাজকর্ম সহজ করে দাও,তুমি আমাদের সঠিক পথ দেখাও’ (সুরা কাহাফ : আয়াত ১০)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসুল!) আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্তি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎ পথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।’ (সুরা কাহাফ : আয়াত ১৩)
একান্তই যারা যৌবনে ইবাদত-বন্দেগি ত্যাগ করে বিপথে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্যও আল্লাহ তাআলার রহমতের দরজা খোলা। তাদেরকে নিরাশ না হতে কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘(হে রাসূল!) আপনি বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা যুমার : আয়াত ৫৩)
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনায়-
‘সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাঁর (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হলো সে সব যুবক-যুবতি; যারা তার রবের ইবাদতের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে।’ (বুখারি)
যুবকদের উদ্দেশ্যে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নসিহত হলো- ‘একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন যেসব তরুণ-তরুণী যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে।’
প্রিয়নবি আরো বলেন, ‘কেয়ামতের দিন ৫টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ব্যতীত মানুষকে এক কদম নড়তে দেয়া হবে না; তার মধ্যে একটি হলো- ‘সে তার যৌবনকাল কোন পথে ব্যয় করেছে।’ (তিরমিযি)
অন্য হাদিসে তিনি ৫টি অবস্থার পূর্বে ৫টি অবস্থাকে মর্যাদা দেয়ার কথা বলেছেন, তন্মধ্যে একটি হলো- ‘তোমরা বার্ধক্যের আগে যৌবনকে মর্যাদা দাও।’(বুখারী)
আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবুয়ত ও রেসালাতের দায়িত্ব দিয়ে নবি ও রাসুলদেরকে টগবগে যুবক বয়সেই দুনিয়াতে প্রেরণ করছেন।
এ কারণেই হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যুবক ছাড়া যেমন কোনো নবি পাঠাননি তেমনি যুবক ছাড়া কাউকে ইলমও দান করেননি।’
বর্তমান সময়ে যুবসমাজের সার্বিক অবক্ষয়ের বড় কারণ হলো সন্তানদের প্রতি পরিবারের দায়িত্বশীলদের যথাযথ তদারকির অভাব। সমাজের অনেক পিতা-মাতা, নিজ সন্তানের চলাফেরা ও গতিবিধির প্রতি লক্ষ্যই রাখেন না।
তাই যুবক-যুবতী যৌবনের উচ্ছ্বলতায় বিবেক, বুদ্ধি হারিয়ে ভুল পথে যাতে পা না বাড়ায়; সেদিকে আগে থেকেই দায়িত্বশীল অভিভাবকদের সতর্ক থাকা জরুরি।
0 Comments