বিদ্যাসাগরের নিজস্ব লেখা থেকে জানা যায় যে স্বয়ং বিদ্যাসাগর নিজেই চাননি সব সম্প্রদায়ের ছাত্ররা সংস্কৃত কলেজে পড়ুক। ১৮৫১ সালে ৭ জানুয়ারি ৬৯ পত্রে তৎকালীন কাউন্সিল অফ এডুকেশনের সেক্রেটারি ক্যাপ্টেন এফ এফ সি হেইস এম এ (Captain FFC Hayes,MA) সংস্কৃত কলেজের সমকালীন প্রিন্সিপাল বিদ্যাসাগরকে অনুরোধ করেন দুটো বিষয়ের ওপর দ্রুত রিপোর্ট পাঠানোর জন্য।
এক ঃ ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ব্যতীত অন্যান্য সম্প্রদায়ের সব ছাত্রের সংস্কৃত কলেজে পড়ার সুযোগ আছে কিনা।
দুইঃ সংস্কৃত কলেজের প্রধান অধ্যাপকবৃন্দ এ বিষয়ে কী ভাবছেন। মাননীয় প্রিন্সিপাল ইশ্বরচন্দ্র ২৮ মার্চ, ১৮৫১, তারিখে যে রিপোর্ট পাঠান, তাতে ছিলো নানা তথ্য সম্বলিত মোট ৯ টি অনুচ্ছেদ। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বিদ্যাসাগর নিজেই লিখেছেন, 'I would suggest that at present Kayastas only be admitted - they form a very respectable portion of the Hindu community of Bengal. (বর্তমানে কেবলমাত্র কায়স্থ সম্প্রদায়ের ছাত্ররা ভর্তি হতে পারবে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশেষ সম্মানীয় অংশে পরিণত হওয়ার কারণে)
সংস্কৃত কলেজে শূদ্রদের পড়াশোনা বন্ধ করার জন্য বিদ্যাসাগর নিজেই মনে করিয়ে দিয়েছেন ' In the days of Manu the only duty prescribed for a sudra was to serve the three superior orders namely Brahmans Kshatayas and Vaishyas' (মনুতে শূদ্রদের কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈশ্যদের সেবা করার কথা বলা হয়েছে।) আট নম্বর অনুচ্ছেদে বিদ্যাসাগর নিজের সুপারিশে লিখেছেন, ' their admission (the other orders of sudras), therefore, would, I fear, prejudice the in teredts of the Institution' ( অন্যান্য শব শূদ্র সম্প্রদায়ের ছাত্ররা ভর্তির সুযোগ পেলে তা প্রতিষ্ঠানের সমুন্নতিতে কুপ্রভাব ফেলবে) এই তথ্য প্রমান করে যে তৎকালীন কাউন্সিল অফ এডুকেশনের ইংরেজ সেক্রেটারির মাথায় সংস্কত কলেজে সব সম্প্রদায়ের ছাত্রদের পড়াশোনা করার বিষয়টা থাকলেও স্বয়ং বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠানের মাথা হিসাবে সেই পথ কে রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন? তিনি চাননি অন্যান্য নিম্নবর্গের শূদ্র ছাত্ররা সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনা করুক। শূদ্র থেকে ধর্মান্তরিত মুসলমান সমাজের ছাত্রদের সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনার সুযোগ নিয়ে শুধু স্বপ্ন নয়, বিদ্যাসাগরজি একবারও দুঃস্বপ্ন দেখেছেন - এমন ভাবলেও চরম মুর্খামি করা হবে।
সকলের শিক্ষার অধিকার নিয়ে বিদ্যাসাগর সার্বিক মনোভাব দেখাতে পারলেন না। বিদ্যাসাগর ভাবতে পেরেছেন মাত্র এক শতাংশ বাঙালির শিক্ষা চিন্তা নিয়ে।
(বিনয় ঘোষ, বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ কলকাতা,২০১১, পৃ ৫৪২-৪৫)
0 Comments