বৌদ্ধদের প্রামাণ্য গ্রন্থ 'দীর্ঘ নিকায়' বর্ণিত আছে মানুষ যখন গৌতম বুদ্ধের  কথা এবং ধর্মভুলে যাবে, তখন আর একজন বুদ্ধের আবির্ভূত হবেন। তাঁর নাম 'মেত্তিয়' (সংস্কৃত- মৈত্রেয়ী)  অর্থাৎ শান্তি ও করুণার বুদ্ধ। এই শান্তি বুদ্ধ বা করুণার বুদ্ধ যে হজরত মুহাম্মদ সঃ সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কারণ পবিত্র কুরআনের সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে - "হে নবী  ( হে মুহাম্মদ)  আমি তোমাকে বিশ্ববাসীদের জন্য রহমত বা করুণা হিসাবে পাঠিয়েছি।"


 প্রথম দিকে বুদ্ধের সঙ্গে করুণার বুদ্ধ হজরত মুহাম্মদ সঃ এর অনেক মিল পাওয়া যায়।  যেমন আমরা দেখতে পায় গৌতমবুদ্ধ  বোধি লাভ করার আগে ষোল বৎসর বয়সে গোপা বা যশোধরা নাম্নী এক রাজকন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। তার একটি সন্তান ও হয়েছিল।  পরবর্তী কালে তিনি গৃহত্যাগ করার পর গৌতম আলারা কালামা নামক ঋষির সান্নিধ্যে আসেন। কিন্তু এই ঋষির চরম কঠোর কৃচ্ছসাধনের বা বেশি বাড়াবাড়ির জন্য তিনি ঋষিকে পরিত্যাগ করেছিলেন।  অতঃপর তিনি বোধগয়ার একটি পিপল বৃক্ষের ছায়ায় গভীর ধ্যানে মগ্ন হন। একাসনে যোগরত অবস্থায় ৪৯ দিন থাকার পর তিনি  সত্যকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এই ভাবে পরম জ্ঞান বা বোধলাভ করার জন্য তিনি বুদ্ধ বা জ্ঞানী  নামে পরিচিত হন। এবং তিনি শুধু জ্ঞান লাভ করেই থেমে ছিলেন না। তিনি সেই জ্ঞান পাঁচজন শিষ্যদের মধ্যে প্রচার করেন। 

মহাত্মা বুদ্ধ বোধী লাভ করায় মানুষকে মানবতার জ্ঞান যথা পঞ্চ শীল নীতি ও অষ্টাঙ্গীক মার্গ অনুসরণের কথা বলেছিলেন। সেই সময় ব্রাহ্মণ্যবাদীরা শূদ্রদের প্রতি অবিচার, বঞ্চনা শুরু করেছিল। দেব দেবীর নামে মানুষকে  শোষণ করেছিল, সাধারণ মানুষকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল, নারী মাত্রই শূদ্রাণী বলেছিল, মন্দিরে মন্দিরে দেবদাসী প্রথা শুরু করেছিল। গৌতম বুদ্ধ  তখন ব্রাহ্মণ্যবাদের সকল অমানবতাবাদের চরম বিরোধিতা করেছিল। যা ভারতের ইতিহাসে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দোলন নামে পরিচিত।  ঠিক এই সময় জৈন ধর্মের শিষ্যরা বৌদ্ধ ধর্ম কে কোনঠাসা করার চেষ্টা করেছিল।


আপর দিকে হজরত মুহাম্মদ সঃ ঐশীজ্ঞান লাভ করার আগে ২৫ বছর বয়সে বিধবা মহিলা খাদিজা রাঃ কে বিবাহ করেন। তাঁর বয়সের ঠিক চল্লিশ বছর পর তিনি হেরা গুহায় চল্লিশ দিন ধরে ঐশী জ্ঞান লাভ করেছিলেন। ঐশী জ্ঞান লাভ করার পর তিনি তাঁর স্ত্রী হজরত খাদিজা রাঃ কে ঐশী জ্ঞানের শিক্ষা দিয়েছিলেন।  তারপর হযরত আবু বাকর সিদ্দিক,  হজরত আলী রাঃ ঐশীজ্ঞান লাভ করেন মুহাম্মদ সাঃ  এর নিকট হতে। 

তারপর  হজরত মুহাম্মদ সঃ ক্রমে ক্রমে মানুষকে মুক্তির শিক্ষা ঐশী জ্ঞান দান করতে শুরু করেছিলেন।  সেই সময় ৯০ শতাংশ ছিল নিরক্ষর।  ওই সময় মক্কার ব্রাহ্মণ্যবাদীরা মানুষের প্রভু হয়ে মানুষকে মানুষের গোলামে পরিণত করেছিল। তারা দেবদেবীর নামে মানুষকে শোষণ করত। বংশগত শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করত। নারীদের খুব ঘৃণার চোখে দেখা হত। নারীদের সামাজিক মর্যাদাটুকুও তারা দিতে রাজী ছিল না। এক কথায় তাদের মা মাসি পর্যন্ত জ্ঞান ছিল না। এই সকল মক্কার ব্রাহ্মণ্যবাদী  কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মানুষকে মানুষের দাসত্বের হাত থেকে মুক্তি দেবার জন্য আহ্বান জানিয়েছুলেন। এতে মক্কার ব্রাহ্মণ্যবাদীরা হজরত মুহাম্মদ সঃ কে মারার জন্য চক্রান্ত শুরু করেছিল। পরিশেষে হজরত মুহাম্মদ সঃ মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যায়। সেখানে ছিল আর এক চূড়ান্ত ব্রাহ্মণ্যবাদ যথা ইহুদিবাদ। এই ইহুদীরা ছিল হজরত মুসা আঃ  বা মোজেস এর উম্মত। তারা মুশা আঃ আর্দশ ভুলে যাওয়াই হজরত মুহাম্মদ সঃ বিরুদ্ধে মক্কার ব্রাহ্মণ্যবাদীদের সাথে যুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল।
 
ভারতের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি বৌদ্ধ ধর্ম মৌর্য যুগের পর থেকে বিকৃত হতে শুরু করেছিল। কুষাণ যুগে বৌদ্ধ ধর্ম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল।  যথা হীনযান ও মহাযান।  একদল বুদ্ধের মূর্তি নির্মানের পক্ষে এবং অপর দল বুদ্ধের মূর্তি নির্মানের বিপক্ষে। বৌদ্ধ প্রামাণ্য ধর্মগ্রন্থ হল ত্রিপিটক।  যথা বিনয় পিটক,সূত্র পিটক, ও অভিধর্ম পিটক। এই তিনটি পিটকে সবই বুদ্ধের বানী ছিল না। ঐতিহাসিক রিজ ডেভিড মনে করেন, বিনয় পিটকের সব বক্তব্য বুদ্ধের নয়। পরবর্তী কালে তাঁর প্রত্যক্ষ শিষ্যদের কিছু বক্তব্য এতে স্থান পেয়েছে।  

যে বৌদ্ধ ধর্ম ব্রাহ্মণ্য বাদী সংস্কৃতির প্রতিবাদ স্বরূপ সৃষ্টি হয়েছিল। কালক্রমে বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে বহু বৈদিক সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। যেমন বুদ্ধ মূর্তির প্রতিষ্ঠা করা, এবং তার পূজা করা বা তরাকে বুদ্ধের  স্ত্রীরূপে কল্পনা করা হলে বৈদিক ধর্মের সাথে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভেদ কমে যায়। এমন কি ধ্যানরত বুদ্ধকে শিবরূপে কল্পনা করা হয়। হিউয়েন সাঙ এর রচনা থেকে জানা যায় গৌড় রাজ শশাঙ্ক বোধগয়ার পবিত্র বোধ বৃক্ষটি কেটে ফেলেন।

ঠিক এই সময় হজরত মুহাম্মদ সঃ আরবের বুকে মক্কা শরীফে ৫৭০ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেছিল। আর অহির জ্ঞান লাভ করতে শুরু করেছিলেন তাঁর জন্মের  ঠিক চল্লিশ বছর পরে অর্থাৎ ৬১০ সালে। ণারতে এই সময় ৬০৬ সালে থানেশ্বরের সিংহাসনে বসেন হর্ষবর্ধন। হর্ষবর্ধন প্রথম ২৫ বছর ছিল শিবের উপাসক। সম্ভব শেষ জীবনে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিল। তাটপরও তিনি সূর্য ও শিবের প্রতি কোনরূপ অশ্রদ্ধা দেখাননি। প্রয়াগের  মেলার ব্যবস্থা করেন। প্রথম দিনে বুদ্ধের উপাসনা দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে হত যথাক্রমে সূর্য ও  শিবের উপাসনা।

এরপর বৌদ্ধ ধর্মের বিকৃতি সম্পর্কে মন্তব্য  করা নিঃপ্রয়োজন। অর্থাৎ এই সমস্ত বিবরণগুলি থেকে জানা যায় যে বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধের আসল শিক্ষা থেকে সরে এসেছিল।  আর ঠিক এই সময় হজরত মুহাম্মদ সঃ এর আবির্ভাব হয়েছিল।  গৌতম বুদ্ধ যেমন ভারতের ব্রাহ্মণ্য বাদ ও জৈনদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। ঠিক তেমনি হজরত মুহাম্মদ সঃ মক্কার ব্রাহ্মণ্যবাদ  এবং মদিনার ইহুদীবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।
 ভারতের বুদ্ধের অনুসারীরা করুনার বুদ্ধ হজরত মুহাম্মদ সঃ এর জীবন ব্যবস্থা দলে দলে গ্রহণ করেছিল ব্রাহ্মণ্যবাদীদের  অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য। এই জন্য ভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদীরা মুসলিমদের নেড়ে মুসলমান বলে থাকে। কারণ বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নেড়া হয়ে থাকত।

আজ ভারতের ব্রাহ্মণ্যবাদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে।  কারণ ভারতে এখন বৈদিক যুগে প্রবেশ করেছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি সংখ্যালঘুদের উপর দমন পীড়ন চালু আছে।