সোমনাথ রায় 


উপেক্ষিত অনগ্রসর শ্রেণির অভাব-অভিযোগ আদায় করে তাদের প্রাপ্য অধিকার পাইয়ে দিতে সমাজের কল্যাণে জাতিসত্তার মর্যাদার অন্বেষক হিসেবে গবেষণা করছেন উদার আকাশ পত্রিকা ও উদার আকাশ প্রকাশন সংস্থার কর্ণধার ফারুক আহমেদ। অসংখ্য উজ্জ্বল নক্ষত্রের মধ্যে উজ্জ্বল এক জ্যোতিষ্ক ফারুক আহমেদ। 



একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই এই বঙ্গের নয়া চিন্তার অন্যতম প্রতিনিধি তিনি। সমাজমনস্কতার ক্ষেত্রে পরিচিত হয়ে উঠেছেন দুরন্ত গতিতে। নতুন সমাজ ভাবনার মূল্যবোধকে যাঁরা সাহিত্যের পাতায় পাতায় সাজিয়ে দিয়ে সৃষ্টি করেন এক বিরল ভাবনার, ফারুক আহমেদ তাঁদের অন্যতম। সাহিত্য সচেতন মানুষের কাছে উদার আকাশ ইতিমধ্যেই দাগ কেটেছে। মানুষের জন্য বাঁচার আকাশ দেখাই সাহিত্যিক ফারুক আহমেদ-এর স্বপ্ন।


দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নাটাপুকুর গ্রামে ১৯৮৩ সালে ৭ মার্চ ফারুক আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন। নাটাপুকুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পড়াশোনা, এরপর ঘটকপুকুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক। ভাঙড় উচ্চবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক (বিজ্ঞান শাখায়) পাশ করেন প্রথম বিভাগে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধীন সুরেন্দ্রনাথ দিবা কলেজ থেকে স্নাতক হন। এম এস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব লাইব্রেরি সায়েন্স করেন প্রথম বিভাগে। এরপর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স করেন। তারপর ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (প্রকাশনা ও পরীক্ষা সমূহের) পদে কর্মরত থাকার সময়ে ২০১৬ সালে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারুক আহমেদ ইতিহাস বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রির কাজ শুরু করেন। ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অলক কুমার ঘোষকে গাইড হিসাবে কাছে পান ফারুক আহমেদ। তাঁর গবেষণার বিষয় স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে মুসলিম পরিচালিত মিশন স্কুলের অবদান। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকজন অধ্যাপক ফারুক আহমেদকে স্নেহ করেন এবং উৎসাহ দেন বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম পাল-এর কথা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মানস কুমার সান্যাল ফারুক আহমেদকে তাঁর গবেষণা ও প্রকাশনার কাজের প্রশংসা করেন। গ্রামের অতি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছেন ফারুক আহমেদ। বংশের মধ্যে প্রথম সে পিএইচডি গবেষক হিসেবে কাজ করতে সুযোগ পেয়েছেন স্বনামধন্য কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতিপূর্বে তাদের বংশের কেউ পিএইচডিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি। ফারুক আহমেদ-এর সহধর্মিণী মৌসুমী বিশ্বাসও এডুকেশন বিভাগে পিএইচডি গবেষক হিসেবে কাজ করছেন।



ফারুক আহমেদ বর্তমানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউজ লেটার ইনচার্জ ও রসায়ন বিভাগের অফিস কোর্ডিনেটর পদে কর্মরত আছেন। 
ফারুক আহমেদ ভাব ও ভাষা সমৃদ্ধ ষান্মাসিক সৃজন সাহিত্যের পিয়ার রিভিউড দ্বিভাষিক রিসার্চ জার্নাল ‘উদার আকাশ’ দুই দশকের বেশি সময় ধরে সম্পাদনা করছেন। কলেজে পড়ার সময় টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে, বন্ধু-বান্ধবীদের সহযোগিতায় প্রথম উদার আকাশ (২০০২ সালে) প্রকাশ করেন। স্কুল জীবনে পড়ার সময় প্রথম সাংবাদিকতার হাতে খড়ি। ওই সময় কৃষিকাজ ও সংবাদপত্র বিক্রি করে কর্মজীবন শুরু করেন। উদার আকাশ প্রকাশন থেকে ইতিমধ্যে ১২১টির বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। 
তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ ‘বিশ্বপ্রেম’। ফারুক আহমেদ-এর সম্পাদনায় প্রবন্ধ সংকলন ‘প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়ন’, ‘ফুরফুরা শরিফের পয়গাম’, ‘কংগ্রেস ও বামশাসনে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক’, ‘পশ্চিমে সূর্যোদয় রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উলটপুরাণ’, ‘বিস্তীর্ণ আকাশ জুড়ে কাজী নজরুল ইসলাম’ এবং ‘বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম’। একটি ইংরেজিতে লেখা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর গবেষণা গ্রন্থও সম্পাদনা করেছেন ফারুক আহমেদ। ইতিমধ্যেই ফারুক আহমেদ সম্পাদিত উদার আকাশ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা ‘সংখ্যালঘু ও মুখ্যমন্ত্রী’, ‘মর্যাদার সন্ধানে’, ‘আত্মপরিচয়ের অন্বেষণ’, ‘আত্মবিকাশের দর্পণ’, ‘রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু’, ‘মূল্যবোধের অবক্ষয়’, ‘ভূমিপুত্রদের জাগরণ’ এবং ‘কুৎসার জবাব উন্নয়ন’। রাজ্য রাজনীতিতে পালা-বদলের সন্ধিক্ষণে এই প্রয়াস বঙ্গবাসীকে সচেতন করেছে। আগামীতেও মানুষের মর্যাদার সন্ধানে উদার আকাশ-এর প্রয়াস অটুট রাখতে তিনি দৃঢ়সংকল্প।
ফারুক আহমেদ একাধারে কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং সমাজ সচেতন নাগরিক। তাঁর এই বিরল প্রতিভা এবং মূল্যবোধের সংমিশ্রণ আমাদের সমাজকে সমৃদ্ধ করবে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। উদার আকাশ কেবল পত্রিকা নয়, আত্মমর্যাদার অভিজ্ঞান, উদার আকাশ কেবল স্লোগান নয়, সুস্থ সমাজ গড়ার অঙ্গীকার। উদার আকাশ দিচ্ছে ডাক, ঘরে ঘরে সাহিত্যের আলো পৌঁছে যাক।