প্রথমবারের মতো পেরুতে বাংলাদেশের লেখকের বই ‘ দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: দুই বন্ধু এক দেশ’ স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত



ফারুক আহমেদ


দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু। মাচু পিচু পর্বতমালার জন্য বিখ্যাত। ব্যবসা–বাণিজ্যের রাজধানী লিমা। সেখানে গত ২৪ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় লেখক–পাঠকদের বৃহত্তম মিলনমেলা।অষ্ঠমবারের মতো আয়োজিত ‘কাজামার্কা বইমেলা’ (La Feria de libro Cajamarca (FELICAJ) পেরুর বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বইমেলা। 



বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট, নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিশ্বের প্রথম সেবামূলক কনসার্ট ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। এই মহতী উদ্যোগের ৫০ বছর পূর্তিতে লেখক-গবেষক আবু সাঈদ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের লেখক ও গবেষক প্রিয়জিৎ দেবসরকার যৌথভাবে লেখেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: দুই বন্ধু এক দেশ’। বইটি বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থা স্বপ্ন ’৭১ থেকে প্রকাশিত হয়।

বইটি প্রথম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশের কোনো লেখকের বই পেরুতে স্প্যানিশ ভাষায় পেরুর প্রকাশনা সংস্থা মানো আলজাদা (manoalzada editores) প্রকাশ করে।
২ সেপ্টেম্বর পেরুর সময় সন্ধ্যা সাতটায় কাজামার্কা বইমেলায় ‘জর্জ হ্যারিসন অ্যান্ড দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শত শত পেরুভিয়ান। বইটি নিয়ে আলোচনা করেন মানো আলজাদা প্রকাশনার প্রকাশক, লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়াল্টার ভিলানুয়েভা, বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ পোচো ভেলাসকেজ, লেখক ক্রিশ্চিয়ান শ্যাভেজ ও ভিডিও মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন বইয়ের দুই লেখক আবু সাঈদ ও প্রিয়জিৎ দেবসরকার।


ওয়াল্টার ভিলানুয়েভা বলেন, ‘আমার বন্ধু আবু সাঈদ। একজন বাংলাদেশি লেখক, গবেষক ও প্রকাশক। তিনি আমাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ওপর লেখক ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: দুই বন্ধু এক দেশ’ বইটি অনুবাদ করে প্রকাশ করার প্রস্তাব দেন, বইটি ইতিমধ্যে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। আমি কিছু না ভেবেই প্রস্তাব রাজি হয়ে গেলাম। তিন বছর আগে, বাংলাদেশের জনক মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকীতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের কারণে আমি বাংলাদেশের জনগণের মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে পারি। বইটির মাধ্যেম আমি বিশ্বের প্রথম মানবকল্যাণ কনসার্টটি আয়োজন সম্পর্কে জানতে পারি। সে সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশিদের ওপরে যে গণহত্যা চালায়, তার বিরুদ্ধে জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটনের মতো সংগীতশিল্পীরা একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। বইটি পেরুতে প্রকাশ করতে পেয়ে আমরা আনন্দিত।



বইটি অনুবাদ করেন ভাষাবিদ এনরিক ফার্নান্দো লিওন। এই বইটি প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পেরুর মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ সৃষ্টি হলো। যা আগামী দিনে আমরা দুই দেশের শিল্প–সাহিত্য–ইতিহাসসহ নানা রকমের আয়োজনে যুক্ত থাকব।’


এ ছাড়া রক গ্রুপ Perturflakos-এর Jhoann Sánchez এবং Jean Pierre Araujo একটি মনোমুগ্ধকর গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জর্জ হ্যারিসনের ‘মাই সুইট লর্ড’ গানের মাধ্যমে প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। কলকাতায় বইটির পরিবেশক উদার আকাশ। 



উল্লেখ্য, আগামী অক্টোবরে সৌদি আরবের সাহিত্য সংস্থা থেকে এই বইটি আরবি ভাষায় প্রকাশিত হবে।