বিকেল ৩টা, মুর্শিদাবাদ জেলা সাংবাদিক সংঘের সভাকক্ষ তখন কানায় কানায় ভর্তি; জনপ্রিয় বাচিক শিল্পী নবনীতা পাত্র ওঝা মঞ্চে এসে ঘোষণা করলেন-- মুর্শিদাবাদ তথা বঙ্গভূমির প্রথম কবিতা মেলা, যার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কবিতার জনপ্রিয়করণের উদ্দেশ্যে, একই সাথে জেলার কবি ও কবিতা সকলের সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে; অচিরেই তার শুভ সূচনা ঘটতে চলেছে। তাঁর সঙ্গে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় অংশগ্রহণ করেন জেলার খ্যাতনামা বাচিক শিল্পী শ্রীমন্ত ভদ্র।

মুর্শিদাবাদ কবিতা মেলা কমিটির সভাপতি কবি অরূপ চন্দ্র তাঁর স্বাগত ভাষণে জানালেন বাংলা ভাষার প্রাচীনত্ব, বিবর্তন ও তার সাথে মুর্শিদাবাদ তথা এই জেলাঞ্চলের সম্পৃক্ততার কথা। জানালেন, এ জেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে 'বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন', ভারতের প্রথম গ্রন্থ মেলা, ভারতের প্রথম শিশু বইমেলা, এ জেলাতেই প্রথম 'সারা বাংলা কবিসম্মেলন', কবি শ্যামা দে'র উদ্যোগে; এই ধারাবাহিকতায় প্রথম কবিতা মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে মুর্শিদাবাদ জেলার মাটিতে।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে মেলার উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রথম শিশু বইমেলার রূপকার মাননীয় নির্মল সরকার মহাশয় ও বর্ষিয়ান কবি শম্ভু ভট্টাচার্য মহাশয়। সঙ্গে থাকলেন মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের আরো অনেক কবি শিল্পী সাহিত্যিক-চিত্রশিল্পী পঞ্চানন চক্রবর্তী, কবি সমীর ঘোষ, কবি শ্যামচাঁদ বাগদি, ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদ এবং আরো অনেকে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের সময় কবি হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় ও কবি সুজাতা মিথিলা গেয়ে উঠলেন--- আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।

এই বঙ্গভূমিতে প্রথম কবিতা মেলা অনুষ্ঠিত হবার খবর পেয়ে বাংলাদেশ থেকে কবি আয়েশা সিদ্দিকা কনক একটি 'শুভেচ্ছা কবিতা' পাঠিয়েছেন যা পাঠ করলেন ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদ। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, স্বাগত ভাষণে কবি অরূপ চন্দ্র জানিয়েছেন যে, মুর্শিদাবাদ কবিতা মেলা কমিটি চায় পশ্চিমবঙ্গসহ পৃথিবীর সকল স্থানে যেখানে বাঙালি বসবাস করে সেখানে কবিতার জনপ্রিয়করণে এরকম উদ্যোগ নেওয়া হোক; প্রতিটি জেলায় হোক প্রতিটি শহরে হোক।

সংগীতশিল্পী দেবাশিস দেবনাথ গাইলেন উদ্বোধনী সংগীত। তারপর স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশগ্রহণ করেন জেলার নবীন প্রবীণ অনেকানেক কবি। কবি নির্মলেন্দু কুণ্ডু'র সম্পাদনায় একটি সুদৃশ্য স্মরণিকা প্রকাশ পায়; প্রকাশ করেন--- নবতিপর কবি ও শিক্ষাবিদ হরিশংকর দত্ত। সঙ্গে থাকলেন ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদ, প্রাবন্ধিক চন্দ্র প্রকাশ সরকার ও আরো অনেকে।

বিশেষ উল্লেখ্য, কবিতার জনপ্রিয়করনের জন্য এই মেলা বিগত ৯ জুন আয়োজিত করেছিল 'কবিতা লেখা প্রতিযোগিতা', 'ছড়া লেখা প্রতিযোগিতা' ও 'মুর্শিদাবাদ জেলার কবিদের রচিত কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা'; তিনটি প্রতিযোগিতাই অভিনবত্বের দাবিদার। এই মেলা স্থলেই এই প্রতিযোগিতাগুলির স্থানাধিকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে পুরস্কার ও শংসাপত্র। 

মেলা কমিটির আহ্বায়ক কবি সুশান্ত বিশ্বাস জানালেন--- এই কমিটির প্রত্যেক সদস্য অমানুষিক পরিশ্রম করে এই প্রথম কবিতা মেলা সফল করে তুলছেন। এবছর ছোট করে হলেও আগামীতে এই মেলা মহীরুহের রূপ নেবে বলেই তাঁর বিশ্বাস। 

জানালেন, এই মেলায় জেলার চার প্রবীণ বিশিষ্ট কবি---কবি সৈয়দ খালেদ নৌমান, কবি সন্দীপ বিশ্বাস, কবি অরু চট্টোপাধ্যায় ও কবি নিখিল কুমার সরকার সংবর্ধিত হবেন। 

এছাড়াও, কবিতার বিভিন্ন ধারা বিষয়ে বিশেষ বক্তৃতা করবেন---অরু চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ খালেদ নৌমান, সমীর ঘোষ, সন্দীপ বিশ্বাস ও অরূপ চন্দ্র। 

মেলায় জেলার কয়েকজন বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী-নবনীতা পাত্র ওঝা, শ্রীমন্ত ভদ্র, প্রদীপ আচার্য আবৃত্তি করবেন, মূলত জেলার কবিদের দ্বারা রচিত কবিতা।


আরো জানালেন--- কবি তাপস সরখেল, 
এম নাজিম, প্রভাত কুমার মন্ডল, মণিরুদ্দিন খান, বিপ্লব ভট্টাচার্য্য, মধু মিত্র, সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়, সহিদুল ইসলাম, নির্মলেন্দু কুণ্ডু, এম এ ওহাব, হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস সাহা, সমীর ঘোষ, শ্রীমন্ত ভদ্র, কবিতা অধিকারী, গোপাল বসাক, গোপাল বায়েন, আনন্দ মার্জিত, প্রীতম ঘোষ, সুজাতা মিথিলা, দেবি রাহামিত্র, মধুমিতা গাঙ্গুলি, কালিপদ হাজরা, কুনাল কান্তি দে সহ জেলার নবীন প্রবীণ অনেক খ্যাতনামা কবি, অধ্যাপক, আবৃত্তিকার সামিল হয়েছেন এই উদ্যোগে।