✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
*মানব জীবন বড়ই বিচিত্র। আর এই বিচিত্র জীবনের সবচেয়ে বিষ্ময়কর অধ্যায় হচ্ছে শৈশব।
প্রতিটি শিশুই স্রষ্টার অপার বিষ্ময়ের চাদরে আবৃত। আর সেই অপার বিষ্ময়ের আবৃত চাদর অনাবৃত করার প্রচেষ্টা প্রতিটি শিশুর মাঝে প্রতিনিয়ত বিরাজমান। তার সেই বিষ্ময়ের জগৎ নিয়ে ভাবনার অন্ত নেই।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। প্রতিটি শিশুই জন্মের সময় নানা প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যা তার নিষ্পাপ অন্তরে লুকায়িত থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার লুকায়িত প্রতিভা বিকশিত হয় আপন মহিমায়।
সঠিক পরিচর্যা, পর্যাপ্ত আলো বাতাসে যেমন ছোট চারা গাছ মহীরূপে আবির্ভূত হয়, তেমনি শিশুর সার্বিক বিকাশে প্রয়োজন সুখ- সুন্দর, নির্মল পরিবেশ আর নিবিড় যত্ন।
শিশুর অপার বিষ্ময়, অসীম কৌতুহল, অফুরন্ত আনন্দ ও উদ্যমের মতো মানবিক বৃত্তির সুষ্ঠু বিকাশ সাধনের সূচনা পরিবারের মাঝে প্রথম শুরু হলেও বিদ্যালয়েই সর্বপ্রথম হাতে কলমে বিকশিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যলয়ই শিশুর উন্নত জীবনের স্বপ্ন বুননের আঁতুরঘর। শিশুর যাবতীয় বিকাশ ও গুনাবলী শৈশব থেকে প্রকাশ পেলেও প্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যায় বিস্তৃতি লাভ করে।
আনন্দময় ও শিশুবান্ধব পরিবেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুর বয়স ও সামর্থ্য অনুযায়ী শারীরিক, মানসিক, আবেগিক, সামাজিক, নান্দনিক, বুদ্ধিবত্তীয় ও ভাষাবৃত্তীয় তথা সার্বিক বিকাশে সহায়তা দেয়, আজীবনের শিখনের ভিত্তি রচনা করে ও শিক্ষাঙ্গনে তাদের সানন্দ ও স্বত:স্ফূর্ত অভিষেক ঘটায়।*
*শিশুর মানবিক তথা সার্বিক বিকাশ সাধনের প্রাথমিক বিদ্যালয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বিদ্যালয়ের শিশুর বিকাশ আরও সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত করার জন্য ভারত সরকার স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে অদ্যাবধি নানাবিধ কার্যকর এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শিশুদের আপন মহিমায় বিকশিত হতে প্রতিষ্ঠিত করেছে বহুসংখ্যক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা ও শিখন কার্যক্রম ফলপ্রসু করতে সরকারিভাবে নিয়োগ পেয়েছে বহুসংখ্যক শিক্ষক। নির্মিত হয়েছে শিশুবন্ধব ও আকর্ষণীয় স্থাপনা ও ভবন। শিশুদের মনোরম ও আকর্ষণীয় পাঠদানের জন্য সরকার ইতিমধ্যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ডিজিটালাইজড করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিদ্যুতায়ন, কম্পিউটার ল্যাপটপ বিতরণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের জন্য মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর বিতরণ, ই-মনিটরিং ব্যবস্থায় আনার জন্য বিশেষ ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান, পাঠ্যবই থেকে শুরু করে শিখন সহায়ক না উপকরণ, শিক্ষক সংস্করণ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ, প্রাক প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ বিদ্যালয়ের নিজস্ব চাহিদা পূরণের জন্য স্লিপ বরাদ্দ, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও উৎকর্ষ সাধন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নানা ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানা ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ সরকার নিরলসভবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
এছাড়াও শিশুদের সুকুমার বৃত্তির বিকাশে খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা, বিনোদনের জন্য সরকারিভাবে প্রতিবছর নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য শতভাগ উপবৃত্তি চালু করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ইতোমধ্যে সরকার শিক্ষা সহায়ক ভাতাসহ হুইল চেয়ার, ইয়ারফোন, ঘড়িসহ নানা প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ করেছে। সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও ফলপ্রসু করার জন্য দেশের পাশাপাশি বিদেশেওে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করছে।
শিশুদের সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষায় সরকারিভাবে প্রতিটি বিদ্যালয়ে নির্মিত হচ্ছে ওয়াশব্লক। বিশুদ্ধ পানি যোগানদানে গভীর নলকুপ স্থাপন ও নিশ্চিত করেছে সরকার।*
*শিশুরা বিদ্যালয়ের প্রাণ।
শিশুদের মানবিক, নান্দনিক, মানসিক তথা সার্বিক বিকাশ সাধনে বিদ্যালয় সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের পরিপূর্ণ বিকাশে সরকারের পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতেও নেওয়া হচ্ছে নানা মহতী উদ্যোগ। শিশুর মায়েদের মনে শিশুর বিকাশ সম্পর্কে ধারনা লাভ, ইতবাচক মনোভাব তৈরি ও শিশুদের জ্ঞানের প্রসারে বিদ্যালয়ে আমরা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছি।
মনীষীদের নাম ও জীবনী সম্বলিত পরিচিতি বোর্ড স্থাপন করে শ্রেণি কক্ষের নামকরণ, শিশু ও অভিভাবকদের মনীষীদের জীবনীর সাথে নিজের জীবনকে পরিচালনায় উদ্যোগী হতে সহায়তা করছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে সততা স্টোর চালু, শিশুদের শৈশব থেকে নৈতিক গুনাবলী অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টি করছে। এছাড়া তারা বাস্তব জীবনের আর্থিক হিসাব নিকাশের কার্যক্রম উপলন্ধি ও বিদ্যালয়ে তহবিল গঠনে উদ্যোগী হচ্ছে।
দেয়াল পত্রিকা শিশুদের সৃজনশীল লেখা, প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করছে। বিদ্যালয়ে ফুলের বাগান তৈরিতে শিশুদের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ তাদেরকে কায়িক শ্রমে উদ্বুদ্ধ করছে এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গনকে দৃষ্টিনন্দনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছে।
বিদ্যালয়ে মিনি চিড়িয়াখানা তৈরি করে সহজেই শিশুদের সামনে পাঠ্যপুস্তুকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারনা প্রদান ও আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমাদের বিদ্যালয়ে শিশুদের বলার দক্ষতা বৃদ্ধি, উপস্থানার দক্ষতা বৃদ্ধি ও সংস্কৃতিমনা করতে চালু করা হয়েছে সাপ্তাহিক গল্প বলার আসর।
শিশুর মধ্যে নেতৃত্ববোধ, জন্মদিন পালনের মনোভাব তৈরি করার জন্যে শ্রেণিকক্ষে প্রাক প্রাথমিক শিশুদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের জন্য পৃথক ডিজিটাল রুম চালু করা হচ্ছে। ফলে সময়ের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিতসহ শিখনফল সহজে অর্জন এবং স্থায়ী ও শ্রেণি পাঠদানে শিক্ষার্থী আনন্দ পাচ্ছে।
শিশুদের পুষ্টি ঘাটতি দূর, ক্ষুধা নিবারণ, পাঠে মনোযোগি, উপস্থিতি হার বৃদ্ধির জন্য মিডডে মিল চালু করা হচ্ছে। শিশুর প্রতি অধিক যত্নশীল, শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি, মায়েদের মধ্যে প্রতেযোগিতামুলক মনোভাব সৃষ্টি ও সম্মানিত করার জন্য কৃতী শিক্ষার্থীদের মায়েদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড শিশুদেরকে সামাজিক অস্থিরতা থেকে মুক্ত, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে সহায়তা করছে। মাসিক বিচিত্রানুষ্ঠনের আয়োজন বিদ্যালয়ে মহানুভবতার দেয়াল স্থাপন বিদ্যালয়ে শিশুদের মাঝে মহানুভবতা তৈরি, দান করা মানসিকতা, উপস্থিতি বৃদ্ধি ও ঝরেপড়া রোধে অগ্রনী ভূমিকা রাখছে।
ছোটবেলা থেকে শিশুদের মাঝে সঞ্চয়ের ও সহযোগিতার মানসিকতা তৈরীতে চালু করা হয়েছে। “এসো টিফিন বাঁচাই”। শিশুদেরকে আত্ম প্রত্যয়ী ও নিজেকে পারিপাটি রাখার জন্য বিদ্যালয়ে আয়না স্থাপনা করে নিজেকে দেখার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া শিশুদেরকে শৃঙ্খলা ও ভালো কাজে উৎসাহী করার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের নিয়ম মাফিক একটি ভাল কাজ করার চিন্তা চেতনার বিস্তৃতি ঘটানো হচ্ছে।
এসব কর্মকান্ড শিশুর সার্বিক বিকাশ সাধনে সহায়তা করছে।*
*শিশুকে বিকশিত করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই। নির্মল আনন্দঘন শিশুবান্দব পরিবেশে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক নির্দেশা প্রদানের মাধ্যমে সোনার ভারত এগিয়ে নিতে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের সকলকে আন্তরিকতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে। শিশুদের চিন্তা চেতনার, ধ্যান ধারনায় বিদ্যালয়কে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার প্রচেষ্ঠায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি শিশুকে কুঁড়ি থেকে পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত করতে সরকারের পাশাপাশি বিদ্যালয়, শিক্ষক, অভিভাবক সকলকে আপন মহিমায় সচেষ্ট হতে হবে।
তবেই না শিশুর সার্বিক বিকাশ সম্ভব হবে। প্রতিটি শিশুর হোক এক একটি নুতন সূেযোদয়ের অগ্রদূত। স্বপ্নময় সোনার বাংলা হোক আরও সমৃদ্ধ আরও উন্নত। বিশ্বের বুকে জ্বল জ্বল করে জ্বলুক সাফল্যের দীপশিখা।*
0 Comments