কমলেশের কলম,
*
আই বি এন বাংলা,
*
প্রতিদিন মানুষকে বাঁচানোর জন্য যত না অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে মানুষকে মারার কাজে।
আধিপত্য বিস্তার বা নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্যই মানুষ এসব করছে বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু এর শেষ পরিণতি কী? মানুষ হত্যা ছাড়া অন্য কিছু কী?
একজন মানুষকে হত্যা করাই এখন আরেক মানুষের প্রধান কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মানুষের ভেতরে জেগে থাকা মানুষটি আর জেগে নেই। কুম্ভকর্ণ বছরে দু’বার জেগে উঠত। কিন্তু আমাদের মানবিক মূল্যবোধ হয়তো চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে।*
*মানুষের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা তো বলতে গেলে একেবারেই তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বায়নের ফলে এখন সবকিছুই হাতের মুঠোয়।
সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব ধ্বংসের অস্ত্রও মানুষের হাতেই। বিষাক্ত বায়ুর বিস্ফোরণে গোটা বিশ্ব এখন আরো বেশি বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।
আর এই বিষাক্ত ও দূষিত বায়ুর মধ্যে কোনো রকমে জীবন ধারণ করে টিকে আছি আমরা। কারণ, প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজ খুললেই দেখি বিদ্বেষপরায়ণ মানবিক লাঞ্ছনার বিষাক্ত তথ্য।
যা মানবিক বোধকে প্রচন্ড ধাক্কা দেয়! যখন একটি শিশুকে চোরের অপবাদে দড়ি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি নবজাতক শিশুকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়, কলঙ্কিত ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক সংঘর্ষে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মায়ের পেটের গর্ভের সন্তানকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়; যেখানে পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে পঞ্চাশ বছরের মহিলাকেও ধর্ষণের শিকার হতে হয়- সেখানে কোথায় আমাদের সভ্যতা? কোথায় আমাদের মানবিক মূল্যবোধ?*
*চারদিকে কেবল ভেজাল আর মানহীন পণ্যের ছড়াছড়ি।
ভেজালে ভরা এসব বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে মানবদেহে বাসা বাঁধছে যত অনিরাময়যোগ্য রোগ। সার্বিক পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, এ রোগ থেকে নিরাময়ের আর কোনো রাস্তাই খোলা নেই।
এখন জটিল ও অনিরাময়যোগ্য কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই অকালে মারা যাচ্ছে। এ জটিল রোগ কিংবা অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী কিন্তু মানুষই।
যাদের মধ্যে কোনো মানবিক বোধ নেই। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতার পরিপূর্ণ ছাপ পরিস্ফুটিত হতে দেখা যায়।*
*ভেজালকারীরা মানুষের শত্রু। জীবন রক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে খাদ্য দ্রব্য এমনকি শিশু খাদ্য পর্যন্ত- সবকিছুই তারা নকল করে বা ভেজাল মিশিয়ে বাজারে সরবরাহ ও বিক্রি করছে। তাতে মানুষ শুধু প্রতারিতই হচ্ছে না। নানা- রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
দেশে মাঝেমধ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে মামলা- মোকদ্দমা ও জেল-জরিমানাও হয়।
কিন্তু তাতে পরিস্থিতির বিশেষ কোনো উন্নতি হয়নি। কথায় বলে, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি।
অসৎ ব্যবসায়ীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া উচিত নয়। একটি মানুষের নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ কতটা নিচে নামলে এ রকম জঘন্য কাজ করতে পারে। বর্বরতা পাশবিকতা, পাষন্ডতা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে মরণব্যাধি অসুখের মতো।*
*এসব কিসের আলামত! নারীর জীবনের নিরাপত্তা কি আর অবশিষ্ট থাকবে না মোটেও? ঘরে-বাইরে নারীদের অসহায়ত্বের এ চিত্র অন্ধকার যুগের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
কোন সভ্যতার অসভ্য গলিতে আমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছি? নারীদের জীবন নিয়ে যারা ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে যদি দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেত, তবে নিশ্চয়ই নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা অনেকাংশে কমে আসত।
পারিবারিক শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশিক্ষা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত হলেই নারীরা নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারবে এবং অপরাধীরা দমন হবে।
ঘুণে ধরা সমাজে সর্বত্র যেভাবে ক্ষয়ের লয় শুরু হয়েছে, তাতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা-ভক্তি বিশ্বাসের রজ্জু আর কতকাল মজবুত থাকবে- সেটাই প্রশ্ন।*
*অপরাধ নির্মূল কিংবা সংশোধনের চেয়ে এখন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বেশি জরুরি।
কেননা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অপরাধ ও অপরাধীদের এমনভাবে বিস্তার ঘটেছে, তা রোধ করতে না পারলে এ অবস্থার আরো অবনতি ঘটবে।
ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষতির পরিমাণ আরো দীর্ঘতর হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো পশুকে যদি আদর যত্নে বড় করা হয়, সে পশু কখনো মুনিব বা প্রভুর সঙ্গে বেইমানি করে না।
সর্বদা থাকে প্রভুভক্ত। কিন্তু আজ আর আমরা সেসব পশুর কাতারেও নেই? আমাদের মানবিক মূল্যবোধ এখন তলানিতে ঠেকেছে! আমাদের মন-মানসিকতায় যত দিন পরিবর্তন না আসবে, ততদিন পর্যন্ত এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, আমাদের দেশে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার বেড়ে ওঠা পর্যন্ত অর্থাৎ আমৃত্যু তাকে নানা প্রতারণার শিকার*
*হতে হয়। সুতরাং এসব বাধা দূর করার ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা বা সামাজিক জাগরণ জরুরি। সরকার, গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা প্রতিষ্ঠান ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্টরা এসব বিষয়ে আরো যত্নবান হবে।*
*
স্বাধীনতার এত বছর পরও ভারতের সমাজ ব্যবস্থায় এমন বন্য আচরণ শোভা পায় না। উন্নয়ন উন্নয়ন বলে চিৎকারের পাশাপাশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিজ নিজ আচরণ ঠিক করে নিতে হবে।
নতুবা দায়িত্বশীলতা কোনোদিন সৃষ্টি হবে না। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ বানানো যাবে।
সে অর্থ ব্যক্তিকে আরো হিংস্র করে তুলবে। জাতি হিসেবে আমরা মানুষের বদলে হিংস্র প্রাণী হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি পাব।
এটা কখনই কারো কাছে প্রত্যাশিত নয়।*
0 Comments