আনসারুল আব্বাস 

"মুসলিম ভারত পাঞ্জাবের এই লাজুক ব্যারিষ্টারের কাছে যতটা ঋণী ততটা আর কারো কাছে নয়" 
মওলানা মুহাম্মদ আলি জওহর

সময় কিংবা যুগ একটা স্থানিক কিংবা আঞ্চলিক বৃত্ত তৈরী করে। মানুষ সে বৃত্তে আবদ্ধ থাকে। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে, জীবনযাপন করে তারপর বিদায় নেয়। কিন্তু ধরাপৃষ্ঠে এমন কিছু মানুষের আগমন ঘটেছে যারা সময়ের বন্ধনকে ছিন্ন করে আরো উর্দ্ধে আরোহণ করেন। মানবজাতির জন্য নক্ষত্র হিসেবে তারা হন অজরামর। যুগ যুগ ধরে মানুষ তাদের দেখে পথের দিশা খুজে পায়। আল্লামা মুহাম্মাদ ইকবাল ছিলেন তাদেরই একজন।
    কিন্তু এটা ভেবে অবাক হতে হয়, ইকবাল যে নতুন চিন্তাদর্শন ,মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন তার গুরুত্ব হ্রাস পায়নি এতটুকুও। আধুনিক যুগে ইসলামী দর্শনের স্বার্থক ব্যাখ্যাতা ইকবাল তাই প্রায় শতাব্দীকাল পরেও আজো আমাদের কাছে সমভাবে প্রাসঙ্গিক। ইকবালকে পড়া, চর্চা করা পূর্বের মতোই তাৎপর্য বহন করে।

ইকবাল যে সময়ে চোখ মেলেছিলেন, তৎকালীন দুনিয়ার মতো অবস্থা তার খোলস বদলে আবারো হাজির হয়েছে আমাদের সামনে। যত সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে ইকবালের চিন্তা, উম্মাহ তথা সমগ্র মানবতার জন্য তাঁর দেয়া মুক্তির প্রস্তাবনার সামগ্রিকতা প্রতিভাসিত হয়ে উঠছে। 
ইসলামকে শুধুমাত্র ধর্মতাত্ত্বিক আদর্শে সীমাবদ্ধকরণ এর প্রতিক্রিয়া যে কত ভয়াবহ হতে পারে তা আমাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান। 
ব্যক্তিকেন্দ্রিক ইসলামের প্রবক্তাদের ভিড়ে সত্যিকারার্থে ইসলামের সামগ্রিক বয়ান, পুনর্জাগরণের প্রেক্ষিতে মানবতার মুক্তির জন্য দরদী প্রাণ অন্তর খুজে পাওয়া দায়!
বড্ড অবাক লাগে ইসলামের এই সেক্যুলারীয় রূপ সম্বন্ধে শতাব্দীকাল আগে ইকবাল যে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছিলেন, তার বাস্তব রূপায়ন দেখে।
ইসলামকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্রেফ নৈতিক মতবাদ বানালে কি পরিণাম হবে তা তিনি বলেছিলেন বহু আগেইঃ
‘জালালে বাদশাহী হো, কে জমহুরী তামাশা হো
জুদা হো দীন সিয়াসত সে তো রেহ জাতি হে চেঙ্গেযী’।


(রাজতন্ত্র হোক কিংবা গণতন্ত্রের তামাশাই হোক
দীন থেকে রাজনীতি বিচ্ছিন্ন করলে স্রেফ চেঙ্গীযী নীতি-ই অবশিষ্ট থাকে।)
ইসলাম মানবতার মুক্তির জন্য একমাত্র মতবাদ, যা কিনা এর জন্য সার্বিক রূপরেখা হাজির করে। কালজয়ী এ জীবন দর্শন ব্যতীত সত্যিকারার্থে পাশ্চাত্যের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মানবতার মুক্তি অসম্ভব। কিন্তু বিশ্বজনীন এ জীবনদর্শনকে যা কিনা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুষ্ঠু, ভারসাম্যপূর্ণ ও সর্বোত্তম মূলনীতি দেয় তার একটা সেক্যুলার ভাষ্য খাড়া করে ব্যক্তিগত ইবাদত-আকিদা-দাড়ি-টুপিতে সীমাবদ্ধকরণের প্রতিক্রিয়া যে ভয়াবহ হবে তা সম্পর্কে ইকবাল পাশ্চাত্যের উদাহরণ টেনে সকলকে সাবধান করেন-

“ধর্মের বিনিময়ে এ মিল্লাত মুক্ত যদি হয়
ক্ষতি শুধু সীমাহীন এ মুমিনের ব্যবসায়
দেহ ও আত্মার যুদ্ধে পৃথিবী লিপ্ত হলো ফের
এ সভ্যতা মুক্তি দিলো হিংস্র পশুদের”।

তিনি ইউরোপে সেক্যুলারিজমের উদাহরণ টেনে বলেনঃ
“ইউরোপে খ্রিষ্টধর্ম একটি গির্জাকেন্দ্রিক মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তাদের ধারণা ধর্ম জড়জগতের কলুষতামুক্ত এক আধ্যাত্মিক মতবাদ। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এই ধর্মীর নিয়ন্ত্রণহীনতার পরিণাম যা হয়, ইউরোপেও তাই হয়েছে। স্বৈরাচারিতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অবাধ রাজত্ব কায়েম হয়েছে’।ধর্ম রাষ্ট্রীয় মর্যাদা হারিয়ে নিছক ব্যক্তিগত ও আধ্যাত্মিক ব্যাপারে পরিণত হলে ধর্মহীনতার যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিবে তা থেকে জাতিকে কোনক্রমেই আদর্শ ও মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত নৈতিক চরিত্রে বলীয়ান করা যাবেনা”।
তিনি আরো বলেন-
“ইউরোপের খৃষ্টধর্মের যে পরিণতি হয়েছে, তা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। নীতিবাদ ও রাষ্ট্রশাসন ব্যবস্থার জাতীয় পদ্ধতি দ্বারা যিশুর বিশ্বজনীন নীতিবাদ বিপর্যস্ত হয়েছে। ফলে ইউরোপ যে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে বাধ্য হয়েছে, তা হচ্ছে: ধর্ম হলো ব্যক্তিবিশেষের ঘরোয়া ব্যাপার এবং মানুষের জীবনের সাথে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই”।
ইকবাল সম্পূর্ণ বিপরীতভাবে ইসলামকে বিশ্বজনীন সমাধান হিসেবে পেশ করে বলেনঃ
“ইসলাম মানুষের একত্বকে (Unity) আত্মা ও বস্তুর সমন্বয়াতীত দ্বৈতবাদে (Duality) বিভক্ত করে না। ইসলামে আল্লাহ ও বিশ্বপ্রক্রিয়া, আত্মা ও বস্তু, উপাসনাগার ও রাষ্ট্র পরস্পরের পরিপূরক। মানুষ অন্যত্র অবস্থিত আত্মিক জগতের খাতিরে উপেক্ষণীয় এক অপবিত্র জগতের বাসিন্দা নয়।ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রেই সর্বোত্তম মূলনীতি প্রদান করেছে। ইসলাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে- মানুষ যেমন আল্লাহর সৃষ্টি মানবজাতির জীবনের সকল ক্ষেত্রই নিয়ন্ত্রণের সার্বভৌম ক্ষমতা সে আল্লাহর। আর তাই স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, মানবজাতির জীবনের সকল ক্ষেত্রই তেমনি খোদায়ী অনুশাসনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।”
ইসলামের সামগ্রিকতাকে তুলে ধরে তিনি বলেনঃ
“এ কথা চিরন্তন সত্য ইসলাম (ইউরোপের ন্যায়) কোন গির্জাভিত্তিক মতবাদ নয়। ইসলাম পরিপূর্ণরূপেই একটি রাষ্ট্রদর্শনের নাম। এ এক সুসংহত ও সুশৃঙ্খল জীবনবিধানরূপেই আবির্ভূত হয়েছে এবং এমন সময়ে আবির্ভাব হয়েছে যখন সমকালীন বহুল প্রচারিত আন্তর্জাতিকতাবাদের ধারণাও জন্মলাভ করেনি। ইসলাম শুধু ব্যক্তির চারিত্রিক সংশোধনই কামনা করেনা বরং সমগ্র মানবজাতির সমষ্টিগত জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করাই তার মুখ্য উদ্দেশ্য। গোত্রীয় ও আঞ্চলিক সংকীর্ণ চিন্তাধারার আবর্ত থেকে মুক্তিদান করে গোটা মানবজাতিকে আন্তর্জাতিক মানবতাবাদে উজ্জীবিত করাই ইসলামের প্রধানতম লক্ষ্য”।
সুফীদের খ্রিষ্টীয় দর্শন প্রভাবিত নির্জীব তথা বৈরাগ্যবাদী আধ্যাত্মিকতার সমালোচনা করে ইসলামী আধ্যাত্মিকতাকে ইকবাল দেন পরিপূর্ণ সংজ্ঞায়ন। বলেন-

"Political activities is the expression of Islamic spirituality”
(ইসলামে আধ্যাত্মিকতার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ‘রাজনীতি’।)

ইকবাল লেখেন-
"ইসলামের ক্ষেত্রে ধর্ম শব্দটি যে অর্থে ব্যবহার করা যেতে পারে, তা সুস্পষ্ট। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম কোন যাজকতন্ত্র নয়। এ হচ্ছে রুশোর চিন্তা করার বহু পূর্বে নিয়মবদ্ধ সমাজব্যবস্থা হিসেবে পরিকল্পিত এক রাষ্ট্র এবং তা এমন নৈতিক আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত, যাতে মানুষকে বিশ্বের কোন বিশেষ অংশ দ্বারা পরিচিত ভূমিকেন্দ্রিক প্রাণী হিসেবে ধরা হয়না, বরং তাদেরকে বিবেচনা করা হয় সামাজিক সংগঠনের নীতি অনুযায়ী আত্মিক সত্তা হিসেবে এবং সে সংগঠনের জীবন্ত অংশ হিসেবে তাঁর কর্তব্য নির্ধারিত হয়েছে"।
ব্যক্তিক তথা ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ইসলামের মর্মবস্তুকে তুলে ধরে কিছু আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামের নিষ্প্রাণ কাঠামোর বিপরীতে ইকবাল তুলে ধরেন ইসলামের সামগ্রিক পরিকাঠামো। হাজির করলেন বিশ্বমানবতার মুক্তির রূপরেখা।
ইকবাল মানবতার মুক্তির যে নকশা এঁকেছেন তার সারবস্তু এরূপঃ
এ দুনিয়াকে এক আধ্যাত্মিক সত্তা হিসেবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
ব্যক্তির আধ্যাত্মিক মুক্তি দিতে হবে।
এমন এক বিশ্বজনীন মূলনীতি গ্রহণ করতে হবে, যার মাধ্যমে মানব সমাজের বিবর্তন একটা আধ্যাত্মিক ভিত্তিতে হবে।
তবেই এমন এক দুনিয়া প্রতিষ্ঠা সম্ভব যেখানে ধনী গরিবের ভেদাভেদ থাকবে না, যেখানে কোন সংকটের অস্তিত্ব থাকবে না। এ দুনিয়াকে তিনি আখ্যায়িত করেছেন ‘নয়া জাহান’ নামে।
এভাবে আল্লামার আহ্বান ছড়িয়ে পরে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আটলান্টিক পর্যন্ত। গোটা দুনিয়ায় মানব মুক্তি আন্দোলনের শক্তিশালী ধারাবাহিকতা তৈরী হয়। যা ছিলো পাশ্চাত্য আরোপিত আধুনিকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বাধিক সামগ্রিক ও যৌক্তিক পদক্ষেপ। সুলতান আব্দুল হামীদ হানের কর্মপ্রচেষ্টা ও আল্লামা ইকবালের ইখলাসের ফসল আজকের “মানবমুক্তি আন্দোলন”।
আল্লামা ইকবাল ছিলেন ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া একজন মহানায়ক। তার বহুমাত্রিক প্রতিভা, ও চিন্তাধারা, গভীর জ্ঞানসম্পন্ন লেখনী, ইসলামী চিন্তাধারার ইতিহাসের গতি পরিবর্তন করে দিয়েছে। তিনি ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মাতুরিদী, ইবনে সিনা, আল ফারাবী, ইমাম গাজ্জালী, ইবনে রুশদদের ধারাবাহিকতায় মানবতাকে দেয়া ইসলামী সভ্যতার এক অনন্য উপহার।
যারা ‘সৃষ্টিশীল’, পুনর্জাগরণের পথে হাটতে আগ্রহী ‘মরদে মুমিন’ ইকবাল এক মহান মুজাহিদ ও আলোক দিশারী হিসেবে তাদের নিকট দৃশ্যমান। আজ থেকে প্রায় শতবছর আগে ১৯৩৮ সালের ২১ ই এপ্রিল তিনি আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। কিন্তু রেখে গেছেন তার অনন্যসাধারণ কীর্তি, এবং মানবতার জন্য একমাত্র পথ ‘সীরাতুল মুস্তাকিম’, যে পথে তিনি হেটেছেন সারাটি জীবন।  তিনি লেখেন
‘ভাষায় ধরা দেয়না আমার মনের গোপন ভাব
এ দুনিয়ায় আসছে নও যামানার ইনকিলাব
দূর হবে এই রাতের আধার, উঠবে হেসে সূর্য ফের
এই বাগিচা মুখর হবে সুরে সুরে তাওহীদের’।


ইকবালের এ বাণীর দিকেই অগ্রসর হচ্ছে পাশ্চাত্য সভ্যতা, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কারণ সভ্যতার উত্থান পতনের ধারা পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই-
কোন সভ্যতাই বর্তমান সভ্যতার ন্যায় অবস্থা নিয়ে অগ্রসর হতে পারেনি। বর্তমান সভ্যতা রাসূল (স) এর সময়কার পারসিক ও রোমান সভ্যতার রূপ পরিগ্রহ করেছে। রাসূল (স) সে সোনালী প্রজন্ম তৈরী করেছিলেন, তারা পরবর্তীতে এই জুলুমবাজ সভ্যতাকে সমূলে উৎপাটন করে ইনসাফপূর্ণ এক পৃথিবী উপরহার দিয়েছিলেন মানবসভ্যতাকে। এর চেয়ে সুন্দর পরিবেশ মানবতা এর পূর্বে কখনো অবলোকন করেনি। তাই ইকবাল শেখালেন সে বিজয়ের মূলমন্ত্র-
‘সবক ফির পড় সাদাকাত কা, আদালত কা, শুজায়াত কা
লিয়ে জায়েগা তুঝে কাম দুনয়া কী ইমামত কা’।
(‘আবার সত্য, ন্যায় ও হিম্মতের পাঠ গ্রহণ করো,
পৃথিবীর নেতৃত্ব তোমার কাছে ফিরে আসবে।)

প্রশ্ন হলো এ মহান সংগ্রামে চলার মতো লোক কোথা থেকে আসবে। আমরা আল্লাহর সাহায্য পাবো কি? তাদের জন্য ইকবাল বলেনঃ-
‘আজ ভী হো জো ইবরাহীম কা ঈমান পয়দা
আগ কর সকতী হ্যায় আন্দাযে গুলিস্তাঁ পয়দা’।
(‘আবারো যদি ইবরাহীমের মতো ঈমান তৈরী হয়,
আজও অগ্নিকুন্ডে তৈরী হতে পারে পুষ্পকানন’।)
তাই এ জুলুমী ব্যবস্থার ভিত্তিকে সমূলে মূলোৎপাটন করে, ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা বিনির্মাণের দায়িত্ব মুসলিম উম্মাহর। তাই উম্মাহর যুবকদেরকে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন তাদের দায়িত্ব ও তাদের স্বর্ণালী অতীতের কথা। তাদের উদ্দেশ্য করে ইকবালের দরদভরা আহ্বানঃ-
ওহে মুসলিম যুবক!
ভেবে দেখেছো কি কখনো আপন আদিকথা?
কত মহান ছিলো সে আকাশ-
তুমি যার খসে পড়া একটি তারা
খুইয়ে ফেলেছি মোরা
পূর্বসুরীদের সে উত্তরাধিকার
তাই আকাশ ছুড়ে ফেলেছে মোদের
সপ্তর্ষিমন্ডল থেকে জমিন পানে”।

যুবসমাজকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করতে তিনি নিয়ে আসেন ইনকিলাবের বাণীঃ-

“অতীত স্মৃতি আমার জাতির
পরশ পাথর
আমার অতীত শোনাবে তোমাদের
ভাবী জীবনের বাণী।
ইকবাল আক্ষেপ করে বলেছিলেনঃ
বিগত খুশি কি আর ফিরে আসবে না?
ভোরের মৃদু বাতাস হেজাজ থেকে আসবে কি আসবে না?
ফুরিয়ে এসেছে দিনগুলি এই ফকিরের
আর কোন তত্ত্বজ্ঞানী কি আসবে না?
ইকবালের এই আক্ষেপ, উম্মাহর জন্য তার এই আন্তরিক মর্মবেদনা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছিলো বটে। তার প্রভাবে ইসলামী আন্দোলনের অপরাজেয় কাফেলায় প্রাণ সঞ্চার হয়, নতুনভাবে আগাতে থাকে ইনসাফপূর্ণ পৃথিবী নির্মাণের মহান কারিগরেরা। ইকবালের চিন্তাদর্শনের অন্তর্নিহিত শক্তিমত্তায়ই প্রক্ষুব্ধ হয়ে উঠে তিন মহাদেশব্যাপী মানবতার মুক্তি আন্দোলনের অপরাজেয় তরঙ্গ।
উম্মাহর এই বিপ্লবী চেহারা দেখে যেতে না পারলেও তিনি উম্মাহর মাঝে পুনরুত্থানের অগ্নিস্ফূলিংগ দেখতে পেয়েছিলেন। অনাগত সেই মুজাহিদদের স্বাগত জানিয়ে ইকবাল মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে লিখেছিলেনঃ

‘হেজায ভূমির প্রেমিক যারা শোন সে এক খুশ খবর
গাফিলেরা সব জাগছে আবার বহুদিনের ঘুমের পর’।

ইকবালের চোখে ছিলো উম্মাহর পুনর্জাগরণের স্বপ্ন। এবং তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন মানবতার মুক্তির একমাত্র উপায়-‘ইসলাম’। তার এই বিশ্বাসের কথা তিনি ব্যক্ত করেছিলেন এ ভাষায়-
“আমাদের জাতি একটা গৌরবোজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতীক্ষায়। মিল্লাতের এবং ইসলামের যে মিশন তা অবশ্যই মনযিলে মাকসুদে পৌছতে সক্ষম হবে। সকল তাগুতি শক্তি, অংশীবাদ ও বাতিলের চিহ্ন দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে-আর ইসলামের ঝান্ডাই পতপত করে উড়বে একদিন। নিরন্ধ্র অন্ধকারে আবার জ্বলে উঠবে আশার আলো; পৃথিবীর সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অবশ্যই বিজয়ী হবে ইসলামী আদর্শ”।

তথ্যসূত্রঃ
• ইকবালকে নিয়ে ভাবনা, ফাহমিদ উর রহমান, মক্তব প্রকাশন’২০২১
• ত্রৈমাসিক মিহওয়ার, অক্টোবর-ডিসেম্বর সংখ্যা, পৃঃ ৫৯-৬৪ 
• আল্লামা ইকবাল সংসদ পত্রিকা
• মহাকবি ইকবাল, আবূ সাঈদ নূরূদ্দীন, আইস কর্তৃক প্রকাশিত
• উত্তর আধুনিক মুসলিম মন, ১ম খন্ড, ফাহমিদ উর রহমান, বাসাপ’২০১০ 
° রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ইকবাল, নাসীর আহমেদ