ঘটমপুর : হাওড়া ,

 হ্যাঁ অবশ্যই, আমরা চাইবো "সুসংহত পরিবার সুসংহত সমাজ" সেই সঙ্গে এও চাইবো, একটা কল্যাণময় সুসংহত রাষ্ট্র বা দেশ । 



কারণ, আমরা জানি যে, ইট বালি সিমেন্ট দিয়ে যেমন গড়ে ওঠে অট্টালিকা তেমনি, পরিবার সমাজ নিয়েও তৈরি হয় একটি রাষ্ট্র বা দেশ । এক্ষেত্রে খুব সহজেই অনুমেয় যে, পরিবার হলো রাষ্ট্রের ভিত বা একক । ভিত যদি মজবুত না হয় তাহলে, বাড়ি বা অট্টালিকা বসবাসের জন্য সুদৃঢ় সুন্দর ও সুরক্ষিত হবে না । তৎরূপ, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও একই ফর্মুলা ক্রিয়া করবে । তারপরও, ভিত গড়ার সামগ্রী গুলো ভেজাল ও নিম্নমানের যাতে না হয়,তার প্রতিও সদা সজাগ ও তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে আমাদের । সেরূপ আমাদের পরিবারেরও প্রত্যেক সদস্যদের প্রতিও সদাসর্বদা সচেতন দৃষ্টি দিতে হবে । তাদের চরিত্রে ও জীবনাচরণে যেন, কোন নীতি নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় না দেখা দেয় । যাইহোক, এবার আমরা দেখি পরিবার কাকে বলে ? পরিবারের সংজ্ঞা কি ? Oxford dictionary বলে, A group consisting of one or two parents, their children অর্থাৎ পরিবার গঠিত হয়, বাবা মা আর তাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে । তবে, এই পরিবারের বৈধতা আসে কিন্তু, বিবাহ নামক এক সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে । বিবাহ বহির্ভূত পরিবারের বৈধতা কিন্তু, এখনও আমাদের দেশে ততটা গ্রহণ যোগ্যতা অর্জন করতে পারে নি ।  যা আমরা পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই, তাদের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক লিভ-টুগেদার ও তৎসহ নানা যৌন সম্পর্ককে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা দিয়েছে বা দিয়ে রেখেছে । এর ফল স্বরূপ যা ফলার ফলছে । পরিবারের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হচ্ছে । মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে পূর্ণ আদর্শিক পারিবারিক জীবন গড়ে তোলা, তাদের জন্য আজ ডিঙি চড়ে সাগর পাড়ি দেওয়ার সামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে । পরিবার তথা সমাজ আজ ভ্রুণহত্যা,



পরকীয়া, ধর্ষণ ও ডিভোর্সের মতো  ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত । জারজ সন্তান আজ পশ্চিমা বিশ্বের পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের বহু সমস্যার মধ্যে একটি জ্বলন্ত সমস্যা । যা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে সে সব দেশের সমাজ বিজ্ঞানী ও গুণীজনেরা মানবিক মূল্যবোধ ভিত্তিক পূর্ণ সুন্নতি বা সমুন্নত সুমহান আদর্শের অনুপস্থিতির আকাল-কেই দায়ী করেছেন ।।
              আর, এই আদর্শিক আকাল-পূরণে তারা ত্রাহি ত্রাহি  রব তুলেছে । নারীদের এহেন করুন অবস্থা তারা না দেখার ভান করছে । দশ বছর বয়স থেকে আঠারো ঊনিশ বয়সের মধ্যেই একাধিকবার ধর্ষিত হচ্ছে সে দেশের নারীরা । তারা, তাদের পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকেও নিরাপদ নয় । সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অধিকাংশ নারীই একাধিক বার ধর্ষিত হয়েছে তারই নিজের পরিবারের নানা সম্পর্কের নিকট আত্মীয়র কাছ থেকেই । এরূপ পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরাও পিছিয়ে নেই । সমানে পাল্লা দিয়ে চলেছি আমরা । আমাদের দেশেও অহরহ ঘটে চলেছে পরিবারের নারীদের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার ।। পণপ্রথাকে হাতিয়ার করে, নারীদের উপর দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনে দেশের কয়েকটি রাজ্য তো সামনের সারিতে এগিয়ে এসেছে । বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোর মধ্যে উত্তর প্রদেশ, গুজরাট শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে । পণপ্রথার কারণে পরিবারের মহিলাদের বিয়ের বয়স পার হয়ে গেলেও উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান মিলছে না । তার কারণে বিবাহ বহির্ভূত নানা যৌন কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়ছে পরিবারের মহিলারা। সবচেয়ে করুণ অবস্থা পরিবারের বিধবা মহিলাদের । যে সমাজে আইবুড়ো বা অবিবাহিত মেয়েদের বিয়ে দেওয়া মুশকিল, সেখানে আবার বিধবাদের বিয়ের কথা ভাবা মানে হল, হাত দিয়ে হিমালয় ঠেলার মতো । 
              আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে NCRB বা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্ট সত্যিই আজ দেশের সমাজ বিজ্ঞানী,বুদ্ধিজীবী ও সমাজ সচেতন নাগরিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে । এসমস্ত সমাজ বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী ও সমাজ সচেতন নাগরিকসহ সরকারও আজ এর কবল থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে দিনরাত এক করে ফেলছে । মুক্তি তো দূর, দিনদিন আরও বেড়েই চলেছে । ফ্রয়েডীয় দর্শনের কু-প্রভাব পরিবারের মূল লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও শান্তি বিনষ্ট করে দিয়েছে । যে ফ্রয়েড নিজের সমস্ত জ্ঞান ও মেধাকে ন্যায় ও সততার বিরুদ্ধে নাস্তিকতা, অশ্লীল যৌনতা, অন্যায় ও উৎশৃঙ্খলার পক্ষে ব্যবহার করেছেন । আমরা সেই ফ্রয়েডীয় দর্শনকেই আঁকড়ে ধরেছি । ফলস্বরূপ, আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । পক্ষান্তরে, যে পরিবার এবং সমাজ ইসলামের সুমহান আদর্শকে স্বাগত জানিয়েছে, তারা এই ফ্রয়েডীয় দর্শনের কু-প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস । ইসলামী বিধানে পরিবারের সকল সদস্যের হক বা অধিকার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে । কেউ তার নিজ ইচ্ছা বা মস্তিষ্ক প্রসূত কিছু করা তো দূর, করার দুঃসাহস দেখাতেও পারবে না । মহান আল্লাহ বলেন যে, "কুআনফুসাকুম ওয়া আহলে কুমুর নারা" অর্থাৎ তুমি নিজেকে ও নিজের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও । সূরা ফোরকানের ৫৪ আয়াত : " এবং তিনিই পানি হইতে একজন মানুষ সৃষ্টি করেছেন, তারপর উহা হতে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কগত  দুইটি স্বতন্ত্র আত্মীয়তার ধারা শুরু করেছেন" । পরিবারে এই আত্মীয়তার ধারা বজায় রাখা খুবই জরুরি, আজকের এই নৈতিক অবক্ষয়ের যুগে । সূরা ফোরকানের প্রাথমিক আয়াতগুলোতে পরিবারের ছেলেমেয়েদের  প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার সবক বা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে । সূরা ফোরকান নাযিলের দীর্ঘ আট বছর পরে সূরা নিসা নাযিল হয়েছে । দাম্পত্য জীবনের অনেক সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে সূরা নিসা-য় । এখানে আল্লাহ আমাদের শিক্ষা দিলেন যে, দাম্পত্য জীবনের অনেক আগেই রপ্ত করতে হবে সন্তান-সন্তনিদের নীতি নৈতিকতা ও মূল্যবোধের
 শিক্ষা ।।


               সূরা ফোরকানের ৭৪আয়াতে : "হে আমার রব, আমাদের স্ত্রীদের ও আমাদের সন্তানদের চক্ষুশীতলকারী বানাও" । আল-কোরআনের  এই শিক্ষা নিয়েই আমাদের পরিবারের সদস্যদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে । তাই, আমাদের পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুসংহত করতে হলে, নতুন করে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে ঢেলে সাজাতে হবে । মানুষকে সজাগ ও সচেতন করতে হবে । আমাদের নতুন প্রজন্ম যাতে কল্যাণময় শান্তি ও সমৃদ্ধির পরিবার,সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করতে পারে ||