কহাবত রয়েছে বিশেষ ধর্মাবলম্বী একটি জাতিসত্তাকে 'অ্যানিহিলেট' করার জন্য একদা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে গণহত্যার আয়োজন করেছিলেন সে বাবদে তৎকালীন সিভিলিয়ান হর্স মান্দার ইংরেজি ভাষায় একটি লোমহর্ষক 'কেতাব', লিখেছিলেন, সেটির নাম 'Partition of the Heart. Unmaking the Idea of India'. সেই থেকে হৃদয়কে ভাঙচুর করেই চলেছে।
সাদিয়োঁ কাল থেকে 'হিন্দুস্তান'-এ বহমান ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য আর ঐক্যবদ্ধকে তছনছ করে ধর্মীয় উন্মাদনার এক লজ্জাজনক অধ্যায় তৈরি হয়। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে দেশ এক অদ্ভুত আঁধারের সামনে এসে পড়েছে। ২০২১-এর নির্বাচনে এমনভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে সমাজজীবনে জারিত করেছে যে, ঘৃণার এক অদৃষ্টপূর্ব আর ভয়ানক লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠেছে।
বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দি ভাষাকে কেন্দ্র করে এক জাতি, এক ভাষা আর সনাতন ধর্মাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িকতাবাদে আচ্ছন্ন ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে উদ্যত। এমন এক ধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থা স্থাপনের প্রচেষ্টা করছে, যাতে হিন্দি বলয়ের ব্রাহ্মণ্যবাদীরা তাদের আধিপত্যবাদকে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়।
বহুতর অঙ্গরাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ উন্নততর শিক্ষা-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। সেই 'কৃষ্টি'কে লুপ্ত করতে উদ্যত কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দু-মুসলমান জনগোষ্ঠীকে যুযুধান দু'পক্ষে রূপান্তরিত করার হীনচক্রান্তে লিপ্ত।
এই অপপ্রয়াস রুখতে "উদার আকাশ" প্রকাশনের উদার প্রকাশক দেশ-দশ-সচেতন সম্পাদক ফারুক আহমেদ অতি সম্প্রতি সম্পাদনা করেছেন, 'বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম' নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ সংকলন। বিস্ফোরক এই গ্রন্থটিতে পশ্চিমবাংলার সর্বস্তরের বিদ্বজনদের ২৫ টি সন্দর্ভ রয়েছে। পাঠক সমৃদ্ধ হবেন।
পশ্চিমবাংলার অখন্ড হিন্দু-মুসলিম বাঙালি জাতিসত্ত্বার এমন দুর্যোগের দিনে অভিনব চিন্তা-চর্চা সমন্বিত আলোচনাগুলো বাঙালি মননকে অতুল্য এক ঝাঁকুনি দিয়ে যাবে।
ইতিহাস বলে, বিজেপি’র মূল চালিকা শক্তি আরএসএস ও তার তৎকালীন দোসর হিন্দু মহাসভা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি। বরং ইংরেজদের পক্ষেই ছিল তারা। শুধু তাই নয়, দেশভাগের মূলে প্রকৃতপক্ষে ওই দুই সংগঠনের নেতাদের ভূমিকাই ছিল আসল। অথচ, সেই আরএসএস-জাত বিজেপি’র অধুনা নেতারা দেশভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখাতে কী না করছেন! বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ’র শাসনে ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, তীব্র বেকারত্ব ও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির জোড়া ধাক্কায় দেশবাসীর নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছে। সাধারণ মানুষকে দেওয়া প্রায় কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন করতে পারছেন না মোদি ও তাঁর দোসররা।
এই ব্যর্থতা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে ধর্মকে হাতিয়ার করছেন গেরুয়া নেতারা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবাসীকে বিভক্ত করে নিজেদের আসন নির্বিঘ্ন রাখতে মরিয়া তাঁরা। সেই পরিকল্পনার আরও একটি অংশ হল বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নেওয়া। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের স্বপ্নে বিভোর তাঁরা। ওই স্বপ্ন সফল করতে এখন হাত বাড়িয়েছেন গোটা দেশের দিকে। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দখল নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন।
গেরুয়া শিবিরের ওই অন্যায় আগ্রাসনকে রুখে দিতে বাংলা বহু সচেতন ব্যক্তিত্ব জোরদার লড়াই করছেন। লড়ছেন বহু সাধারণ মানুষও। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে তাঁদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছে "উদার আকাশ।" রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব ওই অগ্রণীদের একটি অংশের ভাবনার প্রতিফলন সংকলিত হয়েছে "বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম" গ্রন্থে।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাড়ে দশ কোটি বাঙালির অনন্যতা রক্ষায় "উদার আকাশ" প্রকাশনের এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, এই অঙ্গীকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সম্পাদক ফারুক আহমেদ।
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ভারতের শুভবুদ্ধির মানুষেরা এগিয়ে আসছেন।
আমরা কখনোই ভুলে না যাই, মিশ্র সংস্কৃতিই আমাদের অর্জিত বৈভব তা আমরা রক্ষা করবই।
মানবিক চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মেধাজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তক, সর্বোপরি আম-জনতার সচেতন অংশটি গেরুয়া শাসনের প্রশাসনিক বদমায়েশি সম্পর্কে নিরন্তর প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজ থেকে উদ্ভূত প্রতিনিধিস্থানীয় সমাজ-বেত্তা, প্রাবন্ধিকদের ভাবনাচিন্তাকে তুলে ধরা হয়েছে "বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম" গ্রন্থটিতে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের একটি অংশ, যারা আজও উটপাখির মতো মরুবালিতে মুখ গুঁজে উপেক্ষিত অংশের জাগরণকে স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত, তাদের বোধোদয় হবে এমন প্রত্যাশা করা যায়। ভারতের ঐতিহ্যের, পরম্পরার এবং সংহতির ঘোর বিরোধী গেরুয়া শাসনের অবসান ঘটাতে এগিয়ে আসছেন সচেতন দেশবাসী। সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতানির্ভর সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাড়ে-গর্দানে এক-হয়ে-যাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের রাজাবাবুরা এতদিন যে সংখ্যালঘিষ্ঠ ও দলিত সম্প্রদায়ের উপস্থিতিকেই স্বীকার করত না, আজ তারাই বেমক্কা নির্লজ্জভাবে ছুটে যাচ্ছেন প্রান্তিকের কাছে ভোট ভিক্ষা চাইতে।
সময়ের দাবী মেনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন উদার আকাশ প্রকাশন ও উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ এমন প্রবন্ধ সংকলন সম্পাদনা করে।
সুবোধ সরকার, সাহানা নাগ চৌধুরী, বাণী বসু, বারিদবরণ ঘোষ, সফিউন্নিসা, তপোধীর ভট্টাচার্য, খাজিম আহমেদ, অশোক মজুমদার, জয়ন্ত সিংহ, সুমন ভট্টাচার্য, জয়ন্ত ঘোষাল, মোশারফ হোসেন, মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়, মোহাম্মদ শামসুল আলম, একরামূল হক শেখ, দীপক দাস, গোলাম রাশিদ, প্রবীর ঘোষ রায়, সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফারুক আহমেদ প্রমুখ এই প্রবন্ধ সংকলনে কলম ধরেছেন।
গ্রন্থটির মূল্য ২৫০.০০/-
বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম
সম্পাদনা ফারুক আহমেদ
প্রকাশক: উদার আকাশ
ঘটকপুকুর, ভাঙড় গোবিন্দপুর-৭৪৩৫০২,
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
কথা: +৯১ ৭০০৩৮২১২৯৮
0 Comments