বাংলার পাল শাসনামলের নয় ও দশ শতকের জনগণের মুখের ভাষাকে ডক্টর নীহাররঞ্জন রায় 'প্রাচীনতম বাংলা ভাষা'রুপে উল্লেখ করেছেন । তার মতে এ বাংলা ভাষাই মাগধী প্রাকৃত অপভ্রংশের গৌড়-বঙ্গীয় রুপ । তিনি উল্লেখ করেন যে, বৌদ্ধ পাল-চন্দ্র যুগে তান্ত্রিক ও বজ্রযানী বৌদ্ধ আচার্যদের ভাষা ছিল প্রাকৃতধর্মী ।
কিন্তু সবে মাত্র গড়ে উঠা বাংলা ভাষার প্রতি সেন-বর্মনশাসিত রাষ্ট্র কিংবা তাদের সমর্থনপুষ্ট সংস্কৃতভাষী বৈদিক ব্রাম্মণেরা সামান্যতম দরদ বা দাক্ষিণ্য দেখায়নি । বাঙ্গালীর মুখের ভাষার বিরুদ্ধে তারা তীব্র দমনমূলক অভিযান চালিয়ে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে বললো, 'লোকজ ভাষায় অষ্টাদশ পুরাণ, রামায়ণ-মহাভারত ইত্যাদী যে মানব শ্রবন করবে, তার ঠাঁই হবে ভয়াবহ রৌরব নরকে । বাঙ্গালীর মুখের ভাষাকে তারা অপবিত্র, ইতর ও পক্ষীর ভাষারুপে অভিহিত করলো । বাঙ্গালীদের ভাষা পরিত্যাজ্য গণ্য হলো । ডক্টর নীহাররঞ্জন রায়ের মতে- ব্রাম্মণ্য শাসনামলে বাংলা ভাষার চরম শোচনীয় অবস্থা হয়েছিল । সে যুগের বাংলা ভাষার সাহিত্যকর্মীগণ ব্রাম্মণ্য নিপীড়নের মুখে দেশের মাটি থেকে উৎখাত হয়েছিল ।
ডক্টর নীহাররঞ্জন রায় উল্লেখ করেছেন যে, 'পাল যুগেই বাংলা ভাষা সবে মাত্র গড়ে উঠেছিল ।'(১৮)
ডক্টর এনামুল হক লিখেছেন, 'খ্রীস্টীয় নবম হইতে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে বাংলা ভাষা স্থায়ী রুপ লাভ করিয়াছিল । এই চারিশত বৎসরই বাংলা ভাষার সৃজ্যমানকাল ।'(১৯)
মুহাম্মদ আবদুল হাইও একমত যে, বাংলাদেশে পাল রাজাদের আমলে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয় । বৌদ্ধ গান ও দোহাগুলি সে কালের বাংলা ভাষার নিদর্শন ।(২০)
ডক্টর ওয়াকিল আহমদ লিখেছেন- 'বৌদ্ধ পাল রাজাদের নৈতিক উদারতা ছিল, তাদের সুশাসনে বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক জীবনে স্বর্ণযুগের সঞ্চয় সমাহৃত হয়েছিল । বাংলা চর্যাপদের জন্ম তখনই ।(২১)
#তথ্যসূত্র
* 'বাংলা ও বাংগালী: মুক্তি সংগ্রামের মূলধারা'- মোহাম্মদ আবদুল মান্নান
* বাঙ্গালীর ইতিহাস'- ডক্টর নীহাররঞ্জন রায়
* 'মুসলিম বাংলা সাহিত্য'- ডক্টর এনামুল হক
* 'সুলতান আমলে বাংলা সাহিত্য'- ওয়াকিল আহমদ
* 'পূর্বোক্ত'
0 Comments